হিমাচল প্রদেশে টানা বর্ষণের জেরে ভয়াবহ ভূমিধস নেমে এল কিন্নরের নাথপা বাঁধ সংলগ্ন এলাকায়। ন্যাশনাল হাইওয়ে-৫ (NH-5)-এর উপর ঘটে যাওয়া এই বিপর্যয়ের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পাহাড় ভেঙে বিশাল পাথর ও ধ্বংসাবশেষ সোজা নেমে আসছে বাঁধের দিকে। দৃশ্যটি দেখে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই কিন্নরে একের পর এক ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে এই ভূমিধসটি সবচেয়ে ভয়াবহ। পাথর ও ধ্বংসাবশেষ নেমে আসার ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ১,৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নাথপা ঝাকরি হাইড্রোপাওয়ার প্রজেক্ট। পাশাপাশি, সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ন্যাশনাল হাইওয়ে-৫-এ যান চলাচল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাস্তা পরিষ্কার করতে দীর্ঘ সময় লাগবে, তাই আপাতত এই রাস্তা এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হিমাচল প্রদেশে এই বছরের বর্ষা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রাজ্যের স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি-র তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ৩৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন ভূমিধস, আকস্মিক বন্যা, বজ্রপাত, ডুবে যাওয়া ও অন্যান্য আবহাওয়াজনিত ঘটনায়। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে আরও ১৬১ জনের।
কিন্নর জেলায় টানা প্রবল বর্ষণের কারণে বারবার ভূমিধস হচ্ছে, যার ফলে ন্যাশনাল হাইওয়ে-৫ বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। ২ সেপ্টেম্বর ওয়াংটু এলাকায় এক ভয়াবহ ভূমিধস পাঁচটি গাড়িকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গাড়িগুলি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল এবং ভিতরে চালকেরা ঘুমোচ্ছিলেন। তবে সৌভাগ্যবশত সবাই অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।
নিগুলসারি ও নাথপা এলাকাতেও রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সেখানে ধ্বংসাবশেষ সরাতে ভারী যন্ত্রপাতি নামানো হয়। এর আগে ৩০ আগস্ট প্রবল বর্ষণ ও টানা ভূমিধসের ফলে ন্যাশনাল হাইওয়ে-৫ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। একাধিক জায়গায় রাস্তা ভেঙে পড়ে, যার ফলে রেকং পিও (জেলা সদর) ও আপার কিন্নরের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
৩১ আগস্ট সকাল পর্যন্ত নিগুলসারি ও নাথপায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে ছিল। কোথাও রাস্তায় বিশাল ফাটল, আবার কোথাও পাহাড় ভেঙে পড়া বোল্ডার রাস্তা আটকে দেয়। এমনকি নাথপা বাঁধের পাশ দিয়ে যে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করা হচ্ছিল, সেটিও ৩১ আগস্ট নতুন ভূমিধসের পর বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা ধরে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসন জানাচ্ছে, যাত্রীদের অযথা ভ্রমণ এড়িয়ে চলা উচিত এবং বিপদজনক এলাকাগুলি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
