দ্রুত ভেঙে পড়ছে বিশ্বের বৃহত্তম হিমশৈল A23a । এই হিমশৈল বিশাল আকারের টুকরো টুকরো অংশে ভাগ হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে-এর বিজ্ঞানীরা।
একসময় প্রায় এক ট্রিলিয়ন মেট্রিক টন ওজনের এই হিমশৈলটির আয়তন ছিল ৩,৬৭২ বর্গকিলোমিটার, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড রাজ্য থেকেও বড়। ১৯৮৬ সালে এটি অ্যান্টার্কটিকার ফিলচনার-রনে বরফস্তর থেকে ভেঙে পড়ে তৈরি হয়।
গত কয়েক দশকে A23a বহুবার বিশ্বের বৃহত্তম বর্তমান হিমশৈলের খেতাব ধরে রেখেছে। তবে কিছু সময়ে আরও বড় কিন্তু স্বল্পস্থায়ী হিমশৈল যেমন A68 (২০১৭) এবং A76 (২০২১) সেই শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছিল। বর্তমানে A23a-এর আয়তন কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১,৭০০ বর্গকিলোমিটার (৬৫৬ বর্গমাইল), যা প্রায় গ্রেটার লন্ডন শহরের সমান।
এটি টানা ৩০ বছরের বেশি সময় অ্যান্টার্কটিকার ওয়েডেল সাগরের তলদেশে আটকে ছিল। ২০২০ সালে হিমশৈলটি আকারে ছোট হয়ে সমুদ্রতল থেকে আলগা হলে সমুদ্রস্রোত সেটিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এরপর এটি একাধিকবার আটকে ও ছাড়িয়ে যায় ২০২০ সালে টেইলর কলামে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আবার চলতে শুরু করে, ২০২৪ সালের মার্চে আবার আটকে যায় এবং মে মাসে মুক্ত হয়ে ভেসে যায়।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে-এর মহাসাগরবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু মেইজার্স জানান, বর্তমানে এটি সাউদার্ন অ্যান্টার্কটিক সার্কামপোলার কারেন্ট ফ্রন্ট নামক শক্তিশালী সমুদ্রস্রোতের টানে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে সাউথ জর্জিয়া দ্বীপের চারপাশে ঘুরছে। এই স্রোতই শেষ পর্যন্ত হিমশৈল ও তার টুকরোগুলোকে উত্তর-পূর্ব দিকে “আইসবের্গ অ্যালি” অঞ্চলে নিয়ে যাবে।
A23a এখন একই পরিণতির মুখোমুখি হচ্ছে, ঠিক যেমন আগে A68 (২০২১) এবং A76 (২০২৩) হয়েছিল। এগুলি সাউথ জর্জিয়ার কাছেই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। তবে A23a তাদের চেয়ে বেশি সময় অক্ষত ছিল। বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম হিমশৈলের মুকুট চলে গেছে D15a-এর হাতে, যার আয়তন প্রায় ৩,০০০ বর্গকিলোমিটার। এটি এখন স্থির অবস্থায় অ্যান্টার্কটিকার উপকূলে অস্ট্রেলিয়ান ডেভিস ঘাঁটির কাছে রয়েছে।
A23a আপাতত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিমশৈল হলেও, মেইজার্স সতর্ক করেছেন যে, খুব শিগগিরই এটি আরও ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্ত আসার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের উষ্ণ জল এটিকে এত ছোট টুকরোয় ভেঙে দেবে যে আর ট্র্যাক করা সম্ভব হবে না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, হিমশৈল ভেঙে পড়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও, মানুষের তৈরি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অ্যান্টার্কটিকায় উদ্বেগজনক পরিবর্তন ঘটছে। উষ্ণ সমুদ্রের জল এবং সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তনের ফলে গত কয়েক দশকে বরফস্তরগুলো থেকে ট্রিলিয়ন টন বরফ গলে বা ভেঙে পড়ে গেছে। এর ফলে ভবিষ্যতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে-এর গবেষক আর-আর-এস স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো সম্প্রতি A23a হিমশৈলের কাছে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছে। এগুলো যুক্তরাজ্যে পরীক্ষা করা হচ্ছে। BAS-এর এক মুখপাত্র জানান, এত বিশাল হিমশৈল ভেঙে গিয়ে ঠান্ডা মিষ্টি জল সমুদ্রে চলে আসায় সমুদ্রতলের প্রাণী ও আশপাশের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে ভবিষ্যতে সাউথ জর্জিয়ার কাছে আরও বেশি বড় হিমশৈল ভাসতে দেখা যেতে পারে। একসময়ের বিশ্বের বৃহত্তম হিমশৈল A23a এখন শেষ প্রান্তে, ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে ও টুকরো হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে মহাসাগরে।