বাংলা ও বাঙালি অস্মিতা ঘিরে জোর দড়ি টানাটানি। ছাব্বিশের ভোটের আবহে শাসক ও বিরোধীদের তৎপরতা তুঙ্গে। এমনই আবহে এবার কলকাতা পুরসভা (কেএমসি) সম্প্রতি একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। যাতে লেখা হয়েছে শহরের সমস্ত নামফলকে বাংলা বাধ্যতামূলক। আর সেটি থাকবে সবার উপরে এবং বিশিষ্ট আকারে। পুর এলাকায় থাকা সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং দোকানগুলিকে এটি কার্যকর করতে হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
পুরসভা সূত্রে খবর, শহরে অন্তত ৪৫ হাজার বাণিজ্যিক সংস্থা রয়েছে যাদের ট্রেড লাইসেন্স পুরসভার আওতায়। ইতিমধ্যেই এই সংস্থাগুলিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলা ভাষার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে এবং কলকাতার সিংহভাগ মানুষ বাংলাতেই স্বচ্ছন্দ। জনস্বার্থে তাই বাংলাকে প্রাধান্য দেওয়া জরুরি।
গত ৩০ আগস্ট পুর কমিশনার ধবল জৈনের সই করা এক একটি বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, নামফলকে বাংলা ব্যবহার আগের মতো ঐচ্ছিক নয়, বরং বাধ্যতামূলক। বিজ্ঞপ্তিতে ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখের পূর্ববর্তী আদেশের কথা স্মরণ করানো হয়েছে। আগের নির্দেশিকায় দোকান এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের সাইনবোর্ডে বাংলা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য “অনুরোধ” করা হয়েছিল। পুরসভার সেই অনুরোধ অনেকেই রাখেনি। তাই মহানগরীর অনেক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে রয়েছে শুধুমাত্র ইংরেজি, হিন্দি বা অন্যান্য ভাষার ব্যবহার।
এবার, কলকাতা পুরসভার সার্কুলারে জানানো হয়েছে তাদের নির্দেশ এবার মানা না হলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হবে। সম্প্রতি কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান তাঁদের নির্দেশিকা মেনে চলে না, তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে। শহরের একটি শপিংমলের সাইনবোর্ড সম্পর্কে একজন কাউন্সিলরের প্রশ্নের জবাবে, হাকিম বলেছিলেন কর্পোরেশনের নির্ধারিত ফর্ম্যাটে বাংলা ব্যবহার করতে অস্বীকারকারী দোকানগুলির লাইসেন্স বাতিল করতে তাঁরা দ্বিধা করবেন না।
ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা ও বাংলা ভাষা নিয়ে বিতর্কের প্রতিবাদে রীতিমতো গণআন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। এমনই আবহে পুজোর মাসে কলকাতা পুরসভার নির্দেশিকা ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক মহলে। তবে কেএমসি কর্তারা কিন্তু অনড়। কিছুদিন আগে পুর অধিবেশনে এক তৃণমূল কাউন্সিলর ইংরেজিতে প্রশ্ন করায় তিরস্কৃত হয়েছেন। চেয়ারপার্সন মালা রায় কাউন্সিলরদের বাংলায় আলোচনা করার আহ্বানও জানিয়েছিলেন। এবার রাজ্যের সরকারি ভাষা বাংলা ঘিরে নির্দেশিকাও জারি করল কেএমসি।