রাহুল গান্ধী ও তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ভোটার অধিকার যাত্রা ১ সেপ্টেম্বর শেষ হল। প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে, ২৫টি জেলা ও প্রায় ১১০টি বিধানসভা কেন্দ্র ছুঁয়ে যাত্রা শেষ করেছে কংগ্রেস ও আরজেডি-র এই কর্মসূচি। কংগ্রেসের জন্য ব্যাপক আশার কারণ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক কারবারিদের একাংশ।
দীর্ঘদিন পর, আরজেডি পতাকার পাশাপাশি কংগ্রেসের পতাকাও সমান গুরুত্ব পাচ্ছে রাজনৈতিক মঞ্চে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্য সহযোগীরাও সংহতি দেখিয়েছে। এমনকি ২০২৬-এর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতার ছাপ এড়াতে চাইলেও তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ইউসুফ পাঠানকে পাঠিয়েছিল অনুষ্ঠানে।
মঞ্চে ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার হেমন্ত সোরেন, শিবসেনা (উদ্ধব) নেতা সঞ্জয় রাউত, বিকাশশীল ইনসান পার্টির মুকেশ সাহনি ও সিপিআই (এম এল)-এর দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। বিভিন্ন পর্বে যোগ দিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা ও তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী এ রেভন্ত রেড্ডি।
যাত্রার সমাপ্তি উপলক্ষে রাহুল গান্ধী বলেন, “ভোট চুরি মানে শুধু ভোট হারানো নয়, বরং অধিকার, সংরক্ষণ, চাকরি ও শিক্ষার ক্ষতি।” তিনি অভিযোগ করেন, মহাত্মা গান্ধীকে যারা হত্যা করেছিল, তারাই আজ সংবিধান ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। ভোটার তালিকার জালিয়াতির প্রসঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দেন, কর্নাটকের ঘটনা ছিল “অ্যাটম বোমা”, আর সামনে আসছে “হাইড্রোজেন বোমা”।
তেজস্বী যাদব অভিযোগ করেন, নীতীশ কুমার সরকার তাদের বিভিন্ন প্রকল্প নকল করেছে, ১৫০০ টাকার ভাতা কমিয়ে ১১০০ টাকা, ২০০ মেগাওয়াট ফ্রি বিদ্যুতের প্রতিশ্রুতি কমিয়ে ১২৫ ইউনিট, আর ১০,০০০ টাকার নারী উদ্যোক্তা সহায়তাও নকল। তিনি বিজেপির ‘ডাবল ইঞ্জিন সরকার’-কে ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে বলেন, “গণতন্ত্র হত্যার চেষ্টা করছেন গুজরাতের দুই নেতা, কিন্তু বিহারবাসী সব বুঝে গেছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই যাত্রা কংগ্রেসকে বিহারে দলের উপস্থিতি, বৈধতা ও প্রাসঙ্গিকতা এনে দিয়েছে। সুলতানগঞ্জে রাহুলের উপর ফুল বর্ষণ করেছে স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীরা। আরজেডি অধ্যুষিত অঞ্চলেও কংগ্রেসের পতাকা বেশি দেখা গেছে। নারী, যুবক, কৃষক, সবাই জমায়েত হয়েছে আশা নিয়ে।
বিহারে দীর্ঘদিন ধরেই কংগ্রেস দ্বিতীয় সারির খেলোয়াড়। ২০২০ সালের নির্বাচনে মাত্র ১৯টি আসন পেয়েছিল দলটি। ২০২৪ লোকসভায় ৯টি আসনের মধ্যে জিতেছে ৩টিতে, ভোট শেয়ার প্রায় ১০ শতাংশ। তা সত্ত্বেও, ভোটার অধিকার যাত্রা কংগ্রেসকে আলোচনার কেন্দ্রে ফিরিয়ে এনেছে।
তবে পুনর্জাগরণ মানেই প্রতিষ্ঠা পাওয়া নয়। আসন ভাগাভাগি, দলীয় দুর্বলতা ও জাতভিত্তিক ভোটব্যাঙ্কের সমীকরণ এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও, এই যাত্রা কংগ্রেসকে দর কষাকষির টেবিলে বাড়তি শক্তি দিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
বিহারের রাজনীতির জমিতে সামান্য উত্থানও বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই যাত্রা থেকে পাওয়া অক্সিজেন কংগ্রেসের জন্য কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয়।