চাকরি ছেড়ে প্রথম ফিচার ফিল্ম বানানোর সিদ্ধান্ত নেন মেয়ে অনুপর্ণা রায়। সেই সময় মেয়ের পথচলা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন কুলটির ব্রহ্মানন্দ রায় ও মণীষা রায়। বাবা-মা কিছুটা দ্বিধায় পড়েছিলেন। প্রশ্ন করেছিলেন—সত্যজিৎ রায়ের মতো কি পারবে কিছু করতে? কিন্তু মাত্র এক বছর পরেই তাঁদের সব দুশ্চিন্তার অবসান।
অনুপর্ণা রায় ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৮২তম আসরে ‘সংসঅফফরগটেন ট্রি’জ’ ছবির জন্য সেরা পরিচালক পুরস্কার জিতে নিলেন অনুপর্ণা রায়। এই সাফল্যে খুশিতে ভরে উঠেছে গোটা পরিবার।
ব্রহ্মানন্দ রায় বলেন, “আমরা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। সিনেমা সম্পর্কে খুব বেশি জানতাম না। শুধু উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেনের ছবি আর গান দেখতে-শুনতেই ভালো লাগত। মেয়ে যখন চাকরি ছাড়তে চাইল, তখন খুব ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু আজ ওর এই জয় আমাদের গর্বিত করেছে।”
মা মণীষা রায় জানান, “স্বামী একসময় রাগ করে মেয়েকে বলেছিলেন, তুমি কি সত্যজিৎ রায়ের মতো কিছু করতে পারবে? কিন্তু মেয়ে নিজের জেদ ধরে রেখেছিল। বলেছিল, বিয়ে পরে হবে, আগে সুযোগ দাও। আজ ওর সাফল্যে আমাদের সব চিন্তা দূর হয়ে গেছে।”
এখন পরিবার অপেক্ষা করছে অনুপর্ণার দেশে ফেরার। ব্রহ্মানন্দ রায় বললেন, “আমরা কুলটিতে থাকি। আমি ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেড-এর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। গ্রামের মানুষ এখন খবর পেয়েছে। মেয়ে এলে একসঙ্গে গ্রামে যাব।” মা মণীষার আবেগঘন কথা, “ও বাড়ি ফিরলেই আমি ওর পছন্দের সব রান্না করব।”
অন্যদিকে, অনুপর্ণার টিমের সদস্যরাও ভীষণ খুশি। তাঁর সহকর্মী সাক্যদেব চৌধুরী (এসআরএফটিআই) বলেন, “অনুপর্ণার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো বাস্তবকে বাস্তবের মতো দেখানোর সাহস। ও জানত কী করা উচিত নয়, তাই আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম কী করা যায়। যেমন, ও স্পষ্ট করে জানিয়েছিল, ছবিতে থাকবে লং টেক, থাকবে না কাট-ইন। আশা করি, ওর এই জয় নতুন প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অনুপ্রাণিত করবে।” ভেনিস জয়ী এখন কুলটির গর্ব। অনুপর্ণার এই সাফল্য গোটা বাংলাকে আনন্দে ভরিয়ে দিয়েছে।