বিহারের ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা বা এসআইআর প্রক্রিয়াকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কে সুপ্রিম কোর্ট সোমবার গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আধার কার্ডকে ‘১২তম পরিচয়পত্র’ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তবে একইসঙ্গে আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, আধার কোনওভাবেই নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়, শুধুমাত্র পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবেই এটি গ্রহণযোগ্য হবে।
বিচারপতি সুর্য কান্ত ও জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ বলেন, আধার আইন অনুসারে আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়।
তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫০ (Representation of the People Act) এর ২৩(৪) ধারা অনুসারে এটি একজন ব্যক্তির পরিচয় প্রমাণের নথি।
আদালত নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে, তাদের সমস্ত কর্মী ও আধিকারিকদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে যাতে তারা আধারকে গ্রহণ করেন। প্রয়োজনে আধারের বৈধতা যাচাই করতে পারবেন কর্মকর্তারা।
নির্বাচন কমিশন মূলত ভোটার তালিকার জন্য ১১টি পরিচয়পত্র গ্রহণযোগ্য ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্ট আধার কার্ডকেও পরিচয় পত্র হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু এডিআর, কংগ্রেস, আরজেডি সহ বিভিন্ন পিটিশনার অভিযোগ করেন, আগের তিনটি আদেশ সত্ত্বেও আধারকে স্বতন্ত্র নথি হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছিল না।
কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল আদালতে বলেন, “আধার সর্বজনীন নথি। গরিব মানুষদের কাছে অন্য নথি নাও থাকতে পারে। আধার না মেনে ভোটার তালিকা থেকে তাদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, কিছু ব্লক লেভেল অফিসারকে (BLO) আধার গ্রহণ করায় শোকজ নোটিশও দেওয়া হয়েছিল।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট রাকেশ দ্বিবেদী, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে যুক্তি দেন যে, আধারকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ধরা যায় না।
তবে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, নাগরিকত্ব যাচাই করা আধারের উদ্দেশ্য নয়, শুধুমাত্র পরিচয় নির্ধারণে এটি ব্যবহার করা যাবে।
দ্বিবেদী জানান, কমিশন ইতিমধ্যেই বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছে যে আধারকে গ্রহণ করা হবে।
বিচারপতি বাগচি মন্তব্য করেন, “কমিশনের তালিকাভুক্ত ১১টি নথির মধ্যে পাসপোর্ট ও বার্থ সার্টিফিকেট বাদ দিলে বাকিগুলোও নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। তাহলে আধারকে বাদ দেওয়া যায় না।”
আদালত আরও বলে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় “mass exclusion নয়, mass inclusion” হওয়া উচিত। অর্থাৎ যত বেশি সংখ্যক মানুষকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব, সেটিই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
শেষে বেঞ্চ স্পষ্ট করে রায় দেয় যে, আধারকে এখন থেকে “১২তম নথি” হিসেবে গণ্য করতে হবে।
আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে :
১. আধার কার্ড পরিচয়পত্র হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
২. এটি নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়।
৩. কর্তৃপক্ষ আধারের সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।
৪. নির্বাচন কমিশনকে এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করতে হবে।
এর ফলে বিহারের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এখন আধার কার্ড একাই যথেষ্ট, অন্য কোনও কাগজপত্র লাগবে না।
আদালতের এই রায় ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় প্রায় ৬৫ লক্ষ বাদ পড়া ভোটারকে ফের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ করে দিতে পারে।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, রায়টি শুধুমাত্র বিহার নয়, ভবিষ্যতে অন্য রাজ্যেও ভোটার তালিকা সংশোধনে নজির হিসেবে কাজ করতে পারে।