একঘেয়ে একইরকম ওয়ার্ক আউট করতে কারোরই ভালো লাগে না। তাই বিভিন্ন রকম শারীরিক অনুশীলনের সমন্বয়ে এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন যন্ত্র ও মেশিনের সঙ্গে যদি ওয়ার্ক আউটের একটা প্যাকেজ তৈরি করে দেওয়া যায় তাহলে সেটা অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয় ।ফিটনেস নিয়ে যারা একটু আধটু মাথা ঘামান তাঁরা জানবেন বসু বল ওয়ার্ক আউটের উপকারিতা। এই ওয়ার্ক আউট -এর মাধ্যমে একদিকে যেমন শরীরের শক্তি বৃদ্ধি হয় ,ধৈর্য
মানসিক দৃঢ়তা বাড়ে তেমনি শরীরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করার কাজটিও খুব ভালোভাবে হয়। বিভিন্ন জিমে এখন তাই বসু বল নামক এই ছোট্ট যন্ত্রটিকে রাখা হচ্ছে ।তবে একে যন্ত্র বা স্পোর্টস আইটেম যাই বলুন না কেন এর উপকারিতা অস্বীকার করার উপায় নেই।
বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে ফিটনেস সচেতন বলে শিল্পা শেট্টির আলাদা একটা পরিচয় আছে। আর সেই শিল্পা কিনা বসু বল ওয়ার্ক আউট করবেন না এমনটা হতেই পারে না। আসুন শিল্পার কাছ থেকে জেনে নেওয়া যাক এর উপকারিতা।
তিনি জানালেন বসু বল ওয়ার্ক আউট -এর মাধ্যমে অনেকেই প্রচুর উপকারিতা পেয়ে থাকেন। যেমন এই ওয়ার্ক আউটটি শরীরের প্রধান প্রধান পেশির ওপর কাজ করে এবং তাকে আরও বেশি সক্রিয় করে তোলে। পেশিকে কর্মক্ষম করে তুলতে বসু বল ওয়ার্ক আউটের কোনও বিকল্প নেই । অনেক সময় কোনওরকম আঘাতের ফলে বা দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে আমাদের পেশিগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে বসু বল ওয়ার্কআউট খুব ভালো কাজ করে। এটি একদিকে যেমন পেশি শক্তি বাড়ায় তেমনি অন্যদিকে শরীরের সার্বিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আর শরীরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা বিভিন্ন অঙ্গের শক্তি বৃদ্ধি করা পেশিকে আরও বেশি সক্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে এই এক্সারসাইজের জুড়ি মেলা ভার।
আসুন এবার দেখে নেওয়া যাক কীভাবে কাজ করে এই বসু বল ওয়ার্কআউট এবং যাঁরা সবে শুরু করছেন তারা কোন কোন বিষয় মাথায় রাখবেন ।
প্রথমেই বলে রাখি অন্যান্য এক্সারসাইজের সঙ্গে এর একটি প্রাথমিক পার্থক্য আছে। বসু বল এক্সারসাইজটি করা হয় অমসৃণ সারফেসের ওপর । অন্যান্য এক্সারসাইজ যেখানে মসৃণ মাটির ওপর দাঁড়িয়ে করানো হয় সেখানে বসু বল এক্সারসাইজটি সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে হাঁটছে। আর এই অমসৃণ সারফেসের ওপর দাঁড়িয়ে পেশির ও শরীরের ব্যালেন্স রাখা এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে যোগাযোগের ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারটি তৈরি করা এই এক্সারসাইজের মূল কথা ।ফিটনেস এক্সপার্ট কুশল পাল সিং বলেন, এভাবে অমসৃণ সার্ফেস -এর ওপর দাঁড়ানোর ফলে মস্তিষ্কে একটি বার্তা পৌঁছয় শরীরে ভারসাম্য ঠিক নেই। আর তখনই মস্তিষ্ক থেকে আরও একটি বার্তা আসে শরীরকে সঠিকভাবে ব্যালেন্সড পজিশনে নিয়ে আসতে হবে। এভাবে অমসৃণ সার্ফেস-এর ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে শরীরের ব্যালেন্স একটা সময় ঠিক হয়ে যায় যার ফলে চট করে আঘাত লাগে না বা লাগলেও তাকে সহজেই সারিয়ে ফেলা যায়।
বসু বল এক্সারসাইজ করার ক্ষেত্রে প্রথমেই যে ভুলটা করা হয় তা হল অনেকেই বলের খুব সামনে অথবা খুব পেছনে গিয়ে দাঁড়ান। ফলে পজিশনটা ঠিক থাকে না। ফিটনেস এক্সপার্ট -এর বক্তব্য হল বলটিকে মাঝখানে রেখে শরীরের সমস্ত ভার শরীরের মাঝখানে কেন্দ্রীভূত করে দু পা ফাঁক করে অমসৃণ সারফেসের উপর দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে এক্সারসাইজটি শুরু করুন। আর অনেকেই আবার আছেন কোন ওয়ার্ম আপ না করেই এই এক্সারসাইজ শুরু করে দেন ।সেটা করবেন না । প্রথমে হালকা কিছু এক্সারসাইজ দিয়ে শুরু করুন ধীরে ধীরে ধীরে ধীরে বসু বলের মতো এক্সারসাইজের দিকে যান। কিছু বসু বল এক্সারসাইজ করার সময় আরেকটি জিনিসের খুব সমস্যা দেখা যায় সঠিক প্রশিক্ষকের অভাব । প্রশিক্ষক ছাড়া নিজে নিজে প্রথম থেকে এই এক্সারসাইজ করলে নানা রকম সমস্যা হতে পারে দুর্ঘটনা, চোট আঘাত অস্বাভাবিক কিছু নয় ।তাছাড়া বলের কোন দিকটা আপনি ধরবেন আর কোন দিকটা ধরবেন না আপনার এক্সারসাইজের প্রয়োজন ও প্যাটার্ন অনুযায়ী বলটা কীভাবে ধরতে হবে সেটাও প্রশিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নিন। তবেই অমসৃণ সারফেসের ওপর এই এক্সারসাইজ শুরু করুন।
কারা কারা এই এক্সারসাইজ করতে পারবেন না —
যে সকল মহিলা গর্ভবতী তাদের এই এক্সারসাইজ না করাই ভালো, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার একেবারে শেষের দিকে ।
যারা সদ্য হাঁটু বা পায়ের কোন আঘাত থেকে উঠেছেন কিংবা হাঁটু রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে অথবা পায়ের কোন অপারেশন হয়েছে তারা এই এক্সারসাইজ করবেন না।
যাঁদের ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা হয় অথবা বয়স্ক ব্যক্তি তাদেরকেও এই এক্সারসাইজ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন ফিটনেস এক্সপার্টরা।
বসু বল এক্সারসাইজ করার সময় কী কী সাবধানতা অবলম্বন করবেন —
প্রথমেই বলব একদম শুরুতে খুব জটিল কোন এক্সারসাইজ করবেন না আস্তে আস্তে শুরু করে ভারী এক্সারসাইজের দিকে যান ।
দ্বিতীয়ত, বসু বলটাকে এমন জায়গায় রাখুন যেখান থেকে এটি স্লিপ না করে যায় ।
তৃতীয়ত, মেরুদন্ড সব সময় সোজা রাখার চেষ্টা করুন।
চতুর্থত, সবসময় তাড়াহুড়ো করবেন না। বসু বল এমন একটা এক্সারসাইজ যা ধীরে শুরু করে ক্রমশ স্পিড বাড়াতে হবে।
