বুদ্ধদেব পাত্র, পুরুলিয়া
পুরুলিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে জেলিয়াপাড়ার ধীবর সম্প্রদায়ের দুর্গাপুজো এ বছর ৯৯ বছরে পা দিল। এই ঐতিহাসিক পুজোর সূচনা এক গভীর অপমানের প্রেক্ষাপটে। ৯৯ বছর আগে প্রতিবেশী একটি পুজোয় পুষ্পাঞ্জলি দিতে গিয়ে অসম্মানিত হন ধীবর সম্প্রদায়ের মানুষজন। সেই অপমান মেনে নিতে পারেননি তাঁরা। ফিরে এসে শপথ নেন, আর কখনও অন্যের পুজোয় নয়, নিজেদের দেবী দুর্গার আরাধনা নিজেরাই করবেন। সেই জেদ থেকেই শুরু হয় জেলিয়া পাড়ার দুর্গাপুজো, যা আজ এক শতাব্দী ছুঁতে চলেছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই পুজো পরিণত হয়েছে পুরুলিয়ার অন্যতম ঐতিহ্য ও আত্মমর্যাদার প্রতীকে।
বর্তমানে এই পুজোর কেন্দ্রবিন্দু সুবিশাল ও স্থায়ী এক মন্দির, যার অনন্য কারুকার্য ও স্থাপত্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। অনেকেই একে প্যান্ডেল ভেবে ভুল করে থাকেন। শহরের মাঝখানে হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড়ে পা ফেলার জায়গা থাকে না। পুজোর পাঁচ দিনে রেকর্ড সংখ্যক ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় উদ্যোক্তাদের। কেবল শহরবাসী নয়, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন এই পুজো দেখতে। ৯৮টি বছর সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়ে এ বছর ৯৯তম বর্ষে পা দিয়েছে জেলিয়া পাড়া দুর্গাপুজো। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, শতবর্ষ উদযাপনকে স্মরণীয় করে তুলতে এই বছর থেকেই শুরু হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি।
এই পুজো শুধুই উৎসব নয়, এক আবেগ ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক ধীবর সম্প্রদায়ের কাছে। পূর্বপুরুষদের অপমান আজও তাঁদের মনে গেঁথে আছে, আর সেই আবেগেই তাঁরা বছরের পর বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোর আয়োজন করে চলেছেন। রীতি-নীতি মেনে, পরম্পরাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই পুজো এখন শুধু একটি সম্প্রদায়ের নয়, সারা পুরুলিয়ার গর্ব। শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে জেলিয়া পাড়ার পুজো আজ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জেদের এক অনন্য নিদর্শন।