কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফের এক শিক্ষার্থীর রহস্য মৃত্যু। বৃহস্পতিবার রাতে ইউজি আর্টস ভবনের উল্টোদিকে একটি ঝিল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২১ বছর বয়সি এক ছাত্রীর মৃতদেহ। ইতিমধ্যেই এই দেহ উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ক্যাম্পাসে।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেটের কাছে যে পার্কিং লট রয়েছে, সেখানে ‘রুহানিয়াত’ নামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ওই ছাত্রী তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে সেই অনুষ্ঠান দেখছিলেন ৪ নম্বর গেটের কাছেই ঝিলের ধারে তিনি বসেছিলেন।
ওই ছাত্রীর সহপাঠীদের থেকে জানা গিয়েছে, অনুষ্ঠানের মাঝেই শৌচাগারে যাওয়ার জন্য উঠেছিলেন তিনি। ৪ নম্বর গেটের কাছে ইউনিয়ন রুমের পাশের শৌচালয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময়েই সম্ভবত তিনি ঝিলে পড়ে যান। আর তাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
এরপর রাত ১০:২০ নাগাদ ওই ঝিল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করেন সহপাঠীদেরই কয়েকজন। এরপরই দ্রুত তাঁকে কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়েও যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বৃহস্পতিবার রাতে কি ঝিলপাড়ে নেশার আসর বসেছিল? মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করেই কি ওই ছাত্রী বেসামাল হয়ে ঝিলে পড়ে যান? নাকি তাঁর সঙ্গে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল?
সহপাঠীদের একাংশের দাবি, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পা টলে গিয়ে ঝিলে পড়ে গিয়েছিলেন। তবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কারণে ৪ নম্বর গেট সংলগ্ন ওই অংশে আলো কম ছিল। ফলে তরুণী পড়ে যাওয়ার সময়ে কেউ সঠিক ভাবে দেখতে পায়নি। পাশাপাশি মাইক বাজায় তরুণীর চিৎকারের আওয়াজও কেউ শুনতে পায়নি।
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য প্রত্যেকেই ক্যাম্পাসে সিসিটিভি লাগানো এবং স্থায়ী পুলিশ পোস্টিংয়ের দাবি না মানার জন্যই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেছেন।
অন্যদিকে, ঘুমের ওষুধ খেয়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলেও একটি অংশের তরফে দাবি করা হচ্ছে। যদিও জানা গিয়েছে, মেয়েটির পোশাক অবিন্যস্ত ছিল। তাঁর শরীরের বাইরে কোনও আঘাতের চিহ্নও মেলেনি।
শুক্রবার কাটাপুকুর মর্গে তাঁর ময়নাতদন্ত হবে। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে তদন্ত শুরু করেছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মদ্যপান কিংবা ঘুমের ওষুধের বিষয়টি স্পষ্ট হবে না বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে পরিবারের একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর খবরের শোকের ছায়া নেমে এসেছে তরুনীর বাড়িতে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নিমতা থানার অন্তর্গত ললিত গুপ্ত স্ট্রিটে তাঁদের বাড়ি। শুক্রবার সকাল থেকেই তার বাড়ির সামনে ভিড় জমায় প্রতিবেশীরা। পাড়ার এক মেধাবী ছাত্রীর এই অস্বাভাবিক মৃত্যু কোনও ভাবে মেনে নিতে পারছেন না প্রতিবেশীরা।
ওই তরুনীর প্রতিবেশী নিধির দাস জানান ‘ওই ছাত্রী যে মদ্যপান করতে পারেন, এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। তদন্ত হলেই সত্য ঘটনা সামনে আসবে। মানুষ হিসেবে মেয়েটি খুবই ভালো ছিল। সকলের সাথে হাসি মুখে কথা বলতো।’
প্রতিবেশী পেশায় শিক্ষিকা পুষ্পিতা ভট্টাচার্য জানান ‘মেয়েটি খুবই শান্ত শিষ্ট স্বভাবের ছিল। কোনদিন গলা উঁচু করে কথা বলতে শুনিনি।’ তিনি আরও বলেন ‘আমি একজন শিক্ষিকা। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রছাত্রীরা পড়তে যাবে। কিন্তু সেখানে যদি কোন শিক্ষার্থীর দেহ উদ্ধার হয় এটা খুবই অবাঞ্ছিত ঘটনা। শিক্ষাঙ্গনে বারবার কেন এরকম ধরনের ঘটনা ঘটছে তা প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। ভবিষ্যতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে এরকম ঘটনা না ঘটে সেটিও নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ওই শিক্ষিকা।