দিল্লির রাজ্য সরকার রাজধানীতে মদ বিক্রি ও কেনাবেচার ধরন আমূল বদলাতে পারে, এমন এক নতুন আবগারি নীতি আনতে চলেছে। আলোচনাধীন প্রস্তাবগুলির মধ্যে রয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা থেকে মদের দোকান সরানো, আউটলেট গুলোকে পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদভাবে সাজানো এবং প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে দাম সামঞ্জস্য করে রাজ্যের সীমানয় মদ পারাপারের কারণে হওয়া রাজস্ব ক্ষতি রোধ করা।
নীতি এখনো খসড়া আকারে থাকলেও, বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। মন্ত্রী পারভেশ বর্মার নেতৃত্বে গঠিত উচ্চস্তরের কমিটি মদ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। কমিটিতে রয়েছেন শিল্পমন্ত্রী মঞ্জিন্দর সিং সিরসা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশীষ সূদ এবং আবগারি দফতরের কর্মকর্তারা।
বর্তমানে দিল্লি ও প্রতিবেশী হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের মধ্যে দাম নিয়ে তীব্র অমিল রয়েছে। দিল্লিতে মদের দাম সস্তা, কিন্তু পার্শ্ববর্তী দুই রাজ্যে কর বেশি হওয়ার কারণে মদের দাম বেশি। এতে বহু ক্রেতা সীমান্ত পার হয়ে মদ কেনেন, ফলে দিল্লি রাজস্ব হারাচ্ছে ও সরবরাহে অসামঞ্জস্য তৈরি হচ্ছে। এই ব্যবধান কমাতে নতুন কাঠামো তৈরি হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এজন্য পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির আবগারি ব্যবস্থা এবং দাম নিয়ে তুলনামূলক সমীক্ষা চলছে।
দিল্লির মদের দোকানগুলিতে প্রিমিয়াম ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের মদ প্রায়শই অপ্রতুল বা অনুপস্থিত থাকে। বিশেষ করে ভারতীয় ব্র্যান্ডের রাম ‘ওল্ড মঙ্ক’ বিশ্বের বাজারে বহুল প্রচলিত, যা এখন খোদ রাজধানীতেই অপ্রতুল। বহুদিন ধরেই ভোক্তা ও খুচরো ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এটি। সরকার এখন উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন ব্র্যান্ডগুলির ধারাবাহিক সরবরাহ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করছে।
দফতরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মদের দোকান থাকার কারণে জননিরাপত্তা ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তাই নতুন ‘জোনিং নিয়ম’ আনা হতে পারে, যাতে ধাপে ধাপে দোকানগুলো আবাসিক এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
সরকার দোকানগুলির চেহারাতেও পরিবর্তন আনতে চায়। প্রস্তাবিত ‘ক্লিন অ্যান্ড প্রিমিয়াম’ মডেলে দোকানে পরিচ্ছন্নতা, যথাযথ আলো ও সুন্দর বিন্যাস, অর্থাৎ কাউন্টারে ভিড় না বাড়িয়ে যাতে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে মদ কেনা যায়, সেই আচরণ বাধ্যতামূলক করা হবে। একইসঙ্গে ক্রেতারা যাতে আউটলেটে ঢুকে নিজের ইচ্ছামত ব্র্যান্ডের মদ পছন্দ করতে পারেন, সেইদিকেও নজর দেওয়া হবে। লক্ষ্য হলো এমন এক নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে ২৫ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে মহিলা সহ পরিবারের যে কোন সদস্য স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন।
এখনো পর্যন্ত কমিটি চারটি মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছে, যার মধ্যে রয়েছে কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান অ্যালকোহলিক বেভারেজ কোম্পানিজ, ব্রুয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া। খুচরো বিক্রেতা ও স্থানীয় স্বার্থসংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বর্তমান নীতি আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হওয়া এই নীতি ২০২১-২২ সালের বিতর্কিত পুরনো কাঠামোর পরিবর্তে আনা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা আগস্ট মাসে এই সংক্রান্ত কমিটি গঠন করে বলেছেন, নতুন নীতি হতে হবে স্বচ্ছ, অর্থনৈতিকভাবে টেকসই এবং সামাজিক দিক থেকেও সংবেদনশীল।
তিনি বলেন, “এই নীতি শুধু রাজ্যের রাজস্ব নয়, দিল্লির জনস্বাস্থ্য, ভোক্তার চাহিদা ও আবাসিক নিরাপত্তার ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।”