বাংলায় প্রাক পুজোর আবহেও ভোটের অঙ্ক। বাংলা ও বাঙালি অস্মিতা ঘিরে দড়ি টানাটানি শাসক ও বিরোধী দলের। সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের একটি ছবি পোস্ট করেছে এআইটিসি। সেখানে দেখা যাচ্ছে মঞ্চে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বক্তৃতা করছেন সুকান্ত। আর তাঁর পায়ের কাছে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছবি।
এআইটিসি-র পক্ষ থেকে সোশাল মিডিয়ায় ছবি সহ লেখা হয়েছে, ‘‘আমরা সবসময় রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্রকে মাথার উপরে রাখি আর বিজেপি রাখে পায়ের নীচে।’’ এআইটিসির অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবেই বাঙালি মনীষীদের অসম্মান করা হয়েছে। আর এটাই বিজেপির বাংলা-বিরোধী মুখ। শুধু এক্স হ্যান্ডেলে পোস্টই নয়, বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকে তুলোধোনা করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ৷
প্রসঙ্গত সম্প্রতি মালদহের চাঁচল কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ আন্দোলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছবি পোড়াতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিও পোড়ানো হয় ৷ এ নিয়ে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য সহ দেশে। নিজেদের এক্স হ্যান্ডেলে সেই ছবি দিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হন বিজেপির তাবড় নেতারা ৷ রবীন্দ্রনাথের ছবি হাতে নিয়ে কলকাতায় মিছিল করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পরিস্থিতি বুঝে অভিযুক্ত ছাত্রনেতাকে বহিষ্কার করেছে টিএমসিপি। তার পর তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশও। সেই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে পাল্টা বিজেপির বিরুদ্ধে মাঠে নামল তৃণমূল। সুকান্ত মজুমদারের জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার ছবি তুলে ধরে, নতুন করে উস্কে উঠেছে বাঙালি অস্মিতা নিয়ে বিতর্ক।
সাংবাদিক বৈঠকে সুকান্ত মজুমদারকে নিশানা করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “যারা বড় বড় কথা বলছে, বিজেপির সেই কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের একটি ছবি এসেছে ৷ তাঁর পায়ের কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ৷ আমরা তো ব্যবস্থা নিচ্ছি, তাঁরা কী করছেন? কখনও শান্তিনিকেতনের ফলক থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম বাদ যায়, কখনও বিজেপি শাসিত ডবল ইঞ্জিন সরকারের সিলেবাস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম বাদ যায় ৷ বিদ্যাসাগরের মূর্তি তাঁরা মিছিল থেকে ভেঙেছিল ৷ কিন্তু সুকান্ত মজুমদার যা করেছেন, তাতে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে ৷”
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, “আমি এতে বিস্মিত নই ৷ বিজেপি এটা বরাবরই করে ৷ বাংলা বা বাঙালি মনীষীকে পায়ের তলায় রাখতে চায়৷ ব্রাত্যর দাবি, “এঁরা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছেন ৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান বোলপুর বলেছেন ৷ সাঁওতাল আন্দোলনের প্রখ্যাত নেতাদের মূর্তি কিংবা পরিচয় না জেনে তাঁদের গলায় মালা পরিয়েছেন আরেক বিজেপি নেতা ৷ তিনি বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গায়ের রং কালো ৷ তাই পরিবারের লোকজন তাঁকে কোলে নিতেন না ৷ এরা যা পারছে তাই করছে৷ বাংলা এবং বাঙালি বিরোধী যে বয়ান, যেটা বিজেপি মনে করছে তৃণমূলের রাজনৈতিক হাতিয়ার, তারা ভুল করছে ৷ এতে শুধু বাঙালি নন, বাংলায় বসবাসকারী অন্য রাজ্যের মানুষও বিজেপিকে পছন্দ করছেন না ৷”
ব্রাত্য আরও বলেন, “দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, বাঙালিটোলার সমস্ত দুর্গাপুজোয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি রাখতে হবে ৷ আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪০ হাজারেরও বেশি দুর্গাপুজো কমিটিকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন ৷ কোনও পুজো কমিটিকে রাজ্য সরকার, দল কিংবা কোনও শাখা সংগঠন বলেছে যে মণ্ডপে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ঝোলাতে হবে? দুর্গাপুজো বাংলার হেরিটেজ ৷ তাই মুখ্যমন্ত্রী খুশি হয়ে এই অনুদান দিচ্ছেন ৷ ইউনেস্কো দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে৷ তার গৌরব ধরে রাখতে মুখ্যমন্ত্রী এটা করছেন ৷”
পুজোর আবহে তাঁকে ঘিরে তৃণমূল কংগ্রেসের এমন আক্রমণের জবাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি পুড়িয়েছে। সেই পাপ ঢাকতে এখন মিথ্যাকে হাতিয়ার করতে চাইছে। যে কর্মসূচির ছবি ওরা দেখাচ্ছে, সেখানে স্টেজের একেবারে সামনের অংশে রবীন্দ্রনাথ এবং বঙ্কিমচন্দ্রের ছবি রাখা ছিল। আমি তার থেকে অনেকটা পিছনে দাঁড়িয়েছিলাম। ছবিটা এমন জায়গা থেকে তুলেছে, যাতে ওই দূরত্ব বোঝা যাচ্ছে না। আমি কোথায় দাঁড়িয়ে ছিলাম আর ছবি কোথায় ছিল তা ব্যারাকপুরের স্থানীয় মানুষ দেখেছেন।’’
বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত আরও বলেন, ‘‘এই ছবিটাকে ঠিক মতো বুঝতে হলে থ্রি ডায়মেনশনে দেখতে হবে। কুণাল ঘোষরা সেটা হয়ত বোঝেন না। পারলে নিজের ছেলেকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, তিনি আইআইটিতে পড়েছেন। তিনি বোঝেন।’’ রবি ঠাকুর-বঙ্কিমচন্দ্র ঘিরে তৃণমূলের এমন আক্রমণকে রাজ্য বিজিপের নেতারা পাপ ঢাকার চেষ্টা বলে উল্লেখ করছেন।
