রবিবার এশিয়া কাপে ভারত-পাক দ্বৈরথের ২৪ ঘন্টা আগে নতুন করে সরগরম দেশের রাজনীতি। গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২৬ জন। সেই ঘটনার পাঁচ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ২২ গজে ফের মুখোমুখি হতে চলেছে ভারত এবং পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে দেশের একাধিক নেতানেত্রী ফের সরব হয়েছেন পাকিস্তান ম্যাচ বয়কটের দাবি জানিয়ে।
পহেলগাঁওয়ে নিহতদের পরিবারে এখনও বিরাজ করছে শোকের আবহ। এই অবস্থায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রিকেট ম্যাচ মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। ম্যাচের ২৪ ঘন্টা আগে তাই কার্যত আগুন জ্বলছে গোটা ভারতজুড়ে। একাধিক রাজনৈতিক নেতানেত্রী পাকিস্তানের সঙ্গে খেলাকে ‘ভুল’ বলেও অভিহিত করেছেন। যার প্রতিবাদে কার্যত গর্জেই উঠেছেন তাঁরা। বিশেষ করে, কংগ্রেস, শিবসেনা (ইউবিটি) এবং আম আদমি পার্টির নেতাকর্মীরা সমালোচনায় মুখর হয়েছেন এই ম্যাচের।
রবিবারের ম্যাচের প্রতিবাদে শনিবার আম আদমি পার্টির নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের বাইরে পাকিস্তানের চিহ্নযুক্ত একটি কুশপুত্তলিকা পোড়ান। যেখানে প্রাক্তন মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ আসন্ন ম্যাচটির সম্প্রচারকারী সকল ক্লাব এবং রেস্তোরাঁগুলিকে বয়কটের আবেদন জানান জনসাধারণের। তাঁর কথায়, “ভারত সরকার ক্রিকেটারদের এমন জঘন্য লোকদের সাথে খেলতে বাধ্য করছে যারা আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে দিয়েছে। আমরা দিল্লির সমস্ত ক্লাব এবং রেস্তোরাঁগুলির মুখোশ খুলে দেব যারা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ সম্প্রচার করবে।”
অন্যদিকে শিবসেনা (ইউবিটি) প্রধান উদ্ধব ঠাকরে হুঁশিয়ারি দেন সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি স্থগিতের প্রসঙ্গ টেনে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিন্ধু চুক্তি স্থগিত প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “জল এবং রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না।” সেই মন্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে ঠাকরে বলেন, “যুদ্ধ এবং ক্রিকেট কীভাবে একইসঙ্গে চলতে পারে? তারা দেশপ্রেম নিয়ে ব্যবসা করেছে। তারা কেবল অর্থ চায়।” এ ছাড়া শিবসেনা (ইউবিটি) সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীও দেশের জনগণকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, “পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদেরকে এবং অপারেশন সিঁদুরকে অপমান করছে। যতক্ষণ না পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন করা থেকে বিরত হয়, আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে চাই না।”
কংগ্রেস সাংসদ ইমরান মাসুদের কথায়, “এটা ব্যবসা ছাড়া কিছুই নয়। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই উত্তেজনা তুঙ্গে। টিকিট চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এ দিকে আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে গিয়েছে, কিন্তু তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। এই লোকগুলো ক্রিকেটের নামে টাকা কামাতে ব্যস্ত। আমাদের বোনেদের পরিবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আর তারা পাকিস্তানিদের সাথে ক্রিকেট খেলতে যাচ্ছে। সরকারের লজ্জা হওয়া উচিত।” সমালোচনার ঝড় উঠেছে নিহতদের পরিবারেও। পহেলগাঁওয়ে প্রাণ হারিয়েছেন শুভম দ্বিবেদী। তাঁর স্ত্রী ঐশণ্য দ্বিবেদী বলেন, “মনে হচ্ছে পহেলগাঁওয়ে নিহত ২৬ জনের প্রতি বিসিসিআইয়ের কোনও সহানুভূতি নেই। তাদের পরিবারের কেউ মারা যায়নি বলে ঘটনাটির কোনও মূল্য নেই তাদের কাছে। ক্রিকেটাররা কেন পাকিস্তানের সঙ্গে খেলছে? তারাও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে।”
সমালোচনার এই ঝড়ের মাঝেই মুখ খুলেছে বিজেপি-ও। তাদের তরফে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর যুক্তি দিয়েছেন, রবিবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা ভারতের জন্য কেন বাধ্যতামূলক। তাঁর কথায়, “যখন এসিসি বা আইসিসি বহুজাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করে, তখন প্রত্যেকটি দেশের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। তা না হলে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়বে তারা। ম্যাচটি খোয়াতে হবে। এবং বিপক্ষ দলটি পয়েন্ট পেয়ে যাবে।” আরও যোগ করেছেন, “ভারত কিন্তু বহু বছর ধরেই পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে না। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী হামলা যতদিন না বন্ধ করবে ততদিন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ সম্ভব নয়।”
রবিবারের ম্যাচের পক্ষে সওয়াল করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ-ও। তিনি বলেন, “যতদূর জানি, আমরা ওদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট খেলি না। কিন্তু বহুদলীয় টুর্নামেন্ট নিয়ে আমাদের কখনও কোনও সমস্যা হয়েছে বলে মনে হয় না। এই ম্যাচটিও বহুজাতিক টুর্নামেন্টের অংশ, দ্বিপাক্ষিক সিরিজের খেলা নয়। যদি এটি একটি শুরু হয় এবং যদি পরিস্থিতি ইতিবাচক দিকে এগোয়, তা হলে এর মতো আর কিছু হতে পারে না।” “খেলাধুলা প্রায়শই রাজনীতির শিকার হয়ে ওঠে”, বলেও দাবি করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী।