প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার মিজোরামের প্রথম রেললাইন—বৈরাবি-সাইরাং ব্রডগেজ প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই পাহাড়ি রাজ্যে রেলের নতুন যুগের সূচনা হল এর মাধ্যমে। ভারতীয় রেলের ১৭২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার রেলপথে মিজোরাম জুড়ে গেল দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে।
৫১.৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইন নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৮,০৭০ কোটি টাকা। ভারতীয় রেলের ইতিহাসে অন্যতম জটিল প্রকল্প হিসেবে একে বর্ণনা করা হচ্ছে। ২০০৮-০৯ সালে অনুমোদনের পর ২০১৫ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পটিতে রয়েছে—৪৫টি টানেল, ৫৫টি বড় সেতু, ৮৭টি ছোট সেতু এবং ১০টি রোড ওভার/আন্ডারপাস।
পুরো রুটের প্রায় ৫৪% অংশই টানেল ও সেতুর মধ্যে দিয়ে গেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাঠামো ব্রিজ নং-১৪৪, সাইরাংয়ের কাছে। ১১৪ মিটার উঁচু এই পিয়ার সেতুটি দিল্লির কুতুব মিনারের থেকেও উঁচু, যা বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ রেলওয়ে পিয়ার ব্রিজ।
রুটটিতে যুক্ত হয়েছে চারটি নতুন স্টেশন—হর্তোকি, কাউনপুই, মুয়ালখাং এবং সাইরাং। বৈরাবি (অসম- মিজোরাম সীমান্ত) থেকে সাইরাং পর্যন্ত সংযোগ তৈরি হওয়ায় প্রথমবারের মতো আইজল শহর সরাসরি ভারতের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হল। এর ফলে গৌহাটি, আগরতলা ও ইটানগরের পর আইজল হল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চতুর্থ রাজধানী, যেখানে সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু হল।
উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী তিনটি নতুন এক্সপ্রেস ট্রেনের সূচনা করেন –
সাইরাং-দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস, সাইরাং-গৌহাটি এক্সপ্রেস ও সাইরাং-কলকাতা এক্সপ্রেস।
প্রথম রাজধানী এক্সপ্রেস শনিবার সকাল ১০টায় সাইরাং থেকে ছেড়ে দিল্লির আনন্দ বিহার টার্মিনালে পৌঁছবে ১৫ সেপ্টেম্বর, সোমবার। নিয়মিত পরিষেবায় এটি প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় সাইরাং থেকে ছাড়বে এবং রবিবার রাতে দিল্লি থেকে ফিরবে।
গৌহাটি এক্সপ্রেস প্রতিদিন চলবে (১৩ সেপ্টেম্বর থেকে), আর কলকাতা এক্সপ্রেস চলবে সপ্তাহে তিনদিন (শনিবার, মঙ্গলবার, বুধবার কলকাতা থেকে এবং সোমবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার সাইরাং থেকে)।
রেল উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ৯,০০০ কোটির বেশি মূল্যের পরিকাঠামোগত প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে—
•৪৫ কিমি দীর্ঘ আইজল বাইপাস রোড
•থেনজওল–সিয়ালসুক রোড এবং খানকাউন–রোংগুরা রোড
•ছিম্তুইপুই সেতু (কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট কাঠামোর অংশ),
•মুয়ালখাং-এ এলপিজি বটলিং প্ল্যান্ট,
কৃষকদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ থেনজওল-সিয়ালসুক রোড, যা ড্রাগন ফল, ধান ও আদা উৎপাদনকারীদের বাজারে পৌঁছনো সহজ করবে।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, হিমালয়ান ভূপ্রকৃতি ও জটিল ভূতাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এই লাইন নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। প্রকল্প সম্পূর্ণ করতে আলগা বালিকে শক্ত করে পাথরে পরিণত করে টানেল খননের মতো জটিল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
সরকারের দাবি, বৈরাবি-সাইরাং রেললাইন চালু হলে মিজোরামে পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলবে, পরিবহন খরচ কমবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ সহজ হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্প ‘Act East Policy’-কে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ।