বিশ্বদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বদলা পূরণ নাকি উলট পুরাণ? পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় প্রাণ গিয়েছিল ২৬ জনের। তার বদলা নিছকই একটি ক্রিকেট ম্যাচ জয়ে হতে পারে কি কখনও? বরং রবিবাসরীয় দুবাইয়ের বয়কটসুলভ আবহে শুরু থেকেই যে চিত্রনাট্য সাজিয়ে দিয়েছিলেন তা দেখে কিছুটা উলট পুরাণ বলতেই যেন ইচ্ছা করে। আবার একইসঙ্গে বয়কট কর্মসূচিও চূড়ান্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করে গেলেন সূর্য কুমার যাদবরা।
তাই এশিয়া কাপের হাইভোল্টেজ দ্বৈরথে মেন ইন ব্লু ৭ উইকেটের একপেশে জয় ছিনিয়ে নিলেও দিনশেষে ফলাফলটা হয়ে গেল গৌণ। সত্যি হয়ে থাকল কেবল উলট পুরাণ এবং বয়কট। বলা ভাল, দ্বিতীয়টি দিয়েই প্রথমটির শুরু আবার শেষও। হ্যাঁ, এশিয়া কাপের মতো বহুজাতিক প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানকে বয়কট করতে পারেনি বিসিসিআই কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু রবিবার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোদস্তুর বয়কটের রাস্তাতেই হাঁটল টিম ইন্ডিয়া। যার শুরুটা হয়েছিল খোদ টসের সময়েই।
এ দিনই ৩৪ থেকে ৩৫ -এ পা দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। কিন্তু জন্মদিনে টসের পর কর মর্দনের মাধ্যমে সৌজন্য বিনিময়ের বিন্দুমাত্র ধার ধারলেন না সূর্য কুমার যাদব। যদিও ম্যাচ শেষেও যে একই ছবি দেখা যেতে পারে তা কেউই ভাবতে পারেনি তখনও। কিন্তু ম্যাচ শেষেও পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাতে এলেন না কোনও ভারতীয়। যা নিয়ে আগামী কয়েকদিন ক্রিকেট দুনিয়া তথা সমাজ মাধ্যম সরগরম থাকবে তাতে সন্দেহ নেই। তবে আইন বাঁচিয়ে আর কী কীভাবে পাকিস্তানকে বয়কট করতে পারত টিম ইন্ডিয়া?
অপারেশন সিঁদুরের পর ভারত কেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবে? বিরোধীরা এই প্রশ্নে গত কয়েকদিন ধরে মোদি সরকারকে যত না বিব্রত করে তুলেছিলেন, ঢের বেশি অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয় ক্রিকেটারদের জন্য। ম্যাচ খেলেও যে বয়কট করা সম্ভব, এ দিন কার্যত সেটাই দেখিয়ে দিলেন গুরু গম্ভীরের ছাত্ররা। একে উলট পুরাণ ছাড়া কী বলবেন? গোটা দেশ জানত, অন্ততঃ এ মুহূর্তে চিরশত্রুদের কিছুতেই উপেক্ষা করতে রাজি নয় ভারতীয় ক্রিকেট। তার পর সূর্য-গিল এ হেন অভিনব বয়কট দেশবাসীর চোখে উলট পুরাণ ছাড়া আর কীই বা হতে পারে?
শুধু কি ভারতীয়দের বয়কটে? উলট পুরাণের দু-একটি নমুনা দেখা গেল পাকিস্তানের পারফরম্যান্সেও। যে কুলদীপ-বরুণ কিংবা হার্দিকের লাইন-লেন্থের দিশা পেতে হিমসিম খেয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের টপ অর্ডার, সেই ত্রয়ীকেই গুণে গুণে ৪ টি ছক্কা হাঁকালেন ৯ নম্বরে নামা শাহিন আফ্রিদি। মূলতঃ তাঁর ১৬ বলে অপরাজিত ৩৩ রানের সুবাদেই শেষপর্যন্ত ১২৭/৯ -এর সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছয় পাক দল। এর পর ভারত যখন ব্যাট করতে নামল, তিন উইকেট তুলে নিলেন সাইম আইয়ুব। ওপেনার হিসেবে যিনি বুমরাহ’র এক ওভারে ছটি ছয় মারবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার তনভীর আহমেদ। কিন্তু সেই সাইম যে আফ্রিদিদের ছাপিয়ে দলের একমাত্র এফেক্টিভ বোলার হয়ে উঠবেন, সে পূর্বাভাস ছিল না হয়ত তাঁর নিজের কাছেও।
পাকিস্তানের কোচ মাইক হেসন দাবি করেছিলেন, সদ্য আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করা মহম্মদ নওয়াজ এই মুহূর্তে কেবলমাত্র তাঁর দলেরই নয়, বরং বিশ্বের সেরা স্পিনার। সেই নওয়াজ নন, এমনকি গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই দুবাইয়ের মাঠেই শুভমন গিলকে বোল্ড করার পর চর্চায় আসা আবরার আহমেদও নন। একমাত্র সাইম-ই এ দিন ওয়াঘার ওপারের সফল স্পিনার তথা বোলার হয়ে রইলেন। একে কী বলবেন উলট পুরাণ ছাড়া?
উলট পুরাণ ঘটল না কেবল এক জায়গাতেই। এ দিন দুবাইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের নামার জন্য সূর্যরা যখন প্রস্তুত হচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ই কয়েক হাজার মাইল দূরে কলকাতায় সিএবি সভাপতির পদে দ্বিতীয়বার মনোনয়ন দাখিল করলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এ সময়ই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আগে থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করা অসম্ভব। কিন্তু ভারত পাকিস্তানের থেকে অনেক এগিয়ে আছে। যে কোনও ফরম্যাটেই।” মহারাজের কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি করলেন সূর্য কুমার যাদব এন্ড কোং। একতরফা ম্যাচের আগাম ভবিষ্যদ্বাণীর পর দুবাইয়ে কোনও উলট পুরাণ ঘটতে দিলেন না তাঁরা।