সুপ্রিম কোর্ট সোমবার ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫-এর কয়েকটি ধারায় স্থগিতাদেশ জারি করেছে। সংশোধনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে একাধিক রিট আবেদন শোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই অন্তর্বর্তী আদেশ কার্যকর থাকবে।
প্রধান বিচারপতি বি.আর. গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহরের ডিভিশন বেঞ্চ এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করেন। আদালত জানায়, পুরো সংশোধনী আইনে স্থগিতাদেশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা আপাতত কার্যকর হবে না।
আদালতের নির্দেশে যে ধারাগুলি স্থগিত হল:
১. ধারা ৩(আর) – পাঁচ বছর প্র্যাকটিসিং মুসলিম হওয়ার শর্ত : আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে দান করার আগে অন্তত পাঁচ বছর প্র্যাকটিসিং মুসলিম হতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট এই ধারা স্থগিত করেছে। আদালতের মতে, রাজ্য সরকার যদি এই বিষয়ে স্পষ্ট নিয়ম বা প্রক্রিয়া না তৈরি করে, তবে ক্ষমতার অপব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আপাতত এই ধারা কার্যকর থাকবে না।
২. কালেক্টরের বিচারগত ক্ষমতা স্থগিত : সংশোধনী আইনে কালেক্টরকে সাধারণ নাগরিকদের অধিকারের বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। আদালত বলেছে, এটি “ক্ষমতার বিভাজন নীতি”-র পরিপন্থী। তাই ট্রাইবুনালের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কালেক্টর কোনো তৃতীয় পক্ষের পক্ষে অধিকার সৃষ্টি করতে পারবেন না।
৩. ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম অন্তর্ভুক্তির সীমা: সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিধান রাখা হয়েছিল। আদালত অন্তর্বর্তী নির্দেশে বলেছে, রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে সর্বাধিক ৩ জন অমুসলিম সদস্য রাখা যাবে। কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ডে সর্বাধিক ৪ জন অমুসলিম সদস্য রাখা যাবে।
তবে ওয়াকফ সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার শর্তে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানায়, এই বিধান নতুন নয়, ১৯৯৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত একইভাবে কার্যকর ছিল। সময়সীমা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও আদালত জানিয়েছে, সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই তাদের রায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি গাভাই এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিতে গিয়ে বলেন: “আমরা ধরে নিয়েছি, রেজিস্ট্রেশনের বিধান ১৯৯৫ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত কার্যকর ছিল এবং এখন ফের চালু হয়েছে। তাই এটি নতুন কোনো শর্ত নয়।”
সুপ্রিম কোর্ট আরও জানিয়েছে, আদালতের এই পর্যবেক্ষণ কেবল প্রাথমিক (prima facie) পর্যায়ের। সংশোধনী আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ভবিষ্যতে সব পক্ষই তাদের যুক্তি উপস্থাপন করতে পারবেন।