দুর্গাপুরের জনসভায় জয় মা দুর্গা, জয় মা কালী বলে ভাষণ শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবার দুর্গাপুজো ঘিরে দিল্লির নির্দেশে জনসংযোগের বড় কর্মসূচিও ছকে ফেলল রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। জনসংযোগের অঙ্গ হিসেবেই শাড়ি বিতরণের কর্মসূচি যেমন গৃহীত হয়েছে, তেমনই পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘিরে রাজ্যের শাসক দলের অপপ্রচার খণ্ডন করার তোড়জোড়ও চলছে। সবকিছুই শুরু হচ্ছে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে পঁচিশের দুর্গোৎসবকে ঘিরে।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী গত রবিবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে মোদিকে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন। পদ্মশিবির সূত্রে খবর, বিমানবন্দরে এই নিয়ে একপ্রস্থ বৈঠকও করেছেন তাঁরা। পরে ফোর্ট উইলিয়ামে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেছেন রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য ও নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। মিনিট তিরিশের সেই বৈঠক ঘিরে মুখ খুলতে চাননি শমীক।
মোদি-রাজনাথের কলকাতা ত্যাগের পর দিল্লি উড়ে যান শুভেন্দু। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করার কথা উল্লেখ করে সন্ধেয় এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন তিনি। সোশাল মিডিয়া পোস্টে শুভেন্দু লিখেছেন, আমাদের বেশ সফল আলোচনা হয়েছে। দুর্গাপুজোর সময় কলকাতায় আসার জন্য তাঁকে(অমিত শাহ) সাদর আমন্ত্রণও জানিয়েছি।
দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে দলের জনসংযোগের মূল দিকগুলি কী হবে তার একটা ইঙ্গিতও দিয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। দিল্লি যাত্রার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাজ্যের শাসক দল পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে মিথ্যাচার করছে। তাঁর বক্তব্য, হরিয়ানা সরকার যে হাজার জন বাংলাভাষী পরিযায়ীদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তাঁদের মধ্যে ৯১৫ জনই বাংলাদেশি। তারা অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছেন। সূত্রের খবর, শাহ সহ পদ্মশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পুজোর দিনগুলিতে এই বিষয়টি তুলে ধরার দিকে বেশি জোর দিতে বলেছেন রাজ্য নেতৃত্বকে।
শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে পুজো ঘিরে তাদের কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই একপ্রস্থ বৈঠক সেরে নিয়েছে। স্থির হয়েছে, শহর থেকে জেলা জুড়ে বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে যাবেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। পুজো প্যান্ডেল থেকেই যাতে দলের বস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি পালন করা যায় সেটি দেখভাল করবেন। একই সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিগ্রহ ঘিরে রাজ্যের শাসক দলের মিথ্যাচারও খণ্ডন করতে হবে তথ্য পরিসংখ্যান পেশ করে।
প্রসঙ্গত, বাংলায় সিপিএম-সহ বামপন্থী দলগুলি ধর্ম এড়িয়ে রাজনীতি করলেও, দুর্গাপুজোর সময় মণ্ডপের আশপাশেই থাকে৷ পুজো ঘিরে তাদের বুকস্টল দেখা যায়৷ সেখান থেকে নিজেদের মতাদর্শ সংক্রান্ত, বামপন্থী নেতাদের লেখা বই বিক্রি করা হয়৷ ধর্মের ছোঁয়াচ এড়িয়ে জনসংযোগ ধরে রাখতে এমন পন্থাই বেছে নিয়েছে বাম দলগুলি।
বামপন্থী দলগুলির দেখানো পথ অনুকরণ করেছে তৃণমূল। রাজ্যে একটু শক্তিশালী হওয়ার পর থেকে তারাও শুরু করেছে পুজোর সময় বুক স্টল খোলা। এর উপর সরকারি তরফে পুজো অনুদান দেওয়া শুরু হতে না হতেই, দলের ছোট-বড় নেতারা সর্বজনীন পুজোর সঙ্গে একরকম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়েছেন। এমনই আবহে, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি, উৎসবের দিনগুলিতে কতটুকু জনসংযোগ চালাতে পারবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।