‘হাইড্রোজেন বোমা’ ফাটানো এখনো বাকি আছে, তবে তার আগেই ফের ভোট চুরি নিয়ে বিস্ফোরক কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে “ভোট চুরি” প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, সারা দেশে পরিকল্পিতভাবে লক্ষ লক্ষ ভোটারের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে এবং এই কেলেঙ্কারিকে আড়াল করছেন ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার।
রাহুল গান্ধীর বক্তব্য অনুযায়ী, এটি কোনও একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং সারা দেশজুড়ে ভোটার ডিলিশনের (নাম বাদ দেওয়া) মাধ্যমে কংগ্রেস ভোটব্যাঙ্ককে টার্গেট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে ১০০ শতাংশ প্রমাণ আছে। আমি এমন কোনও কথা বলছি না যা প্রমাণ করা যাবে না।” তবে “হাইড্রোজেন বোমা” ফাটানো নিয়ে তিনি বলেন, “সেটি এখনও প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেটি ফাটলে প্রধানমন্ত্রী আর মুখ দেখাতে পারবেন না।”
এদিন রাহুল গান্ধী কর্নাটকের আলন্দ বিধানসভা কেন্দ্রের উদাহরণ তুলে ধরেন। তাঁর অভিযোগ, সেখানে ৬,০১৮ ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। তিনি বলেন, “এটা ধরা পড়ে গিয়েছিল কাকতালীয়ভাবে। কিন্তু এরকম ঘটনা বহু জায়গায় ঘটেছে।” তাঁর দাবি, এই ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে দশটি বুথ থেকে যেখানে ২০১৮ সালে আটটি বুথেই কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল।
রাহুল এক মহিলা ভোটারের উদাহরণ দেন। ‘গোদাবাঈ’ নামে ওই নারীর অজান্তে তাঁর নাম ব্যবহার করে ভুয়ো লগ-ইন আইডি খোলা হয় এবং ১২ জন ভোটারের নাম মুছে ফেলা হয়। তিনি বলেন, “গোদাবাঈয়ের কোনও ধারণাই নেই যে তাঁর নামে লগইন বানিয়ে ভোট কেটে দেওয়া হয়েছে।”
রাহুল গান্ধী জানান, ‘সুর্যকান্ত’ নামে এক ব্যক্তি মাত্র ১৪ মিনিটে ১২টি ভোট ডিলিট করেন। এর মধ্যে একজন ভোটার ‘ববিতা চৌধুরী’। প্রমাণ হিসেবে দু’জনকেই তিনি সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত করেন।
প্রমাণ হিসেবে তিনি আরও জানান, ‘নাগরাজ’ নামে একজন মাত্র ৩৮ সেকেন্ডে দুটি ফর্ম পূরণ করেছেন ভোর ৪টা ৭ মিনিটে। “এটা মানবীয়ভাবে সম্ভব নয়। এর মানে অটোমেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে,” দাবি রাহুলের।
তাঁর অভিযোগ, এসব কাজ কেন্দ্রীভূতভাবে পরিচালিত হয়েছে, সম্ভবত কল সেন্টার থেকে। অন্য রাজ্যের ফোন নম্বর ব্যবহার করে একযোগে ভোটার বাদ দেওয়া হয়েছে।
রাহুল গান্ধী সরাসরি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে অভিযুক্ত করে বলেন, “গত দেড় বছরে কর্নাটক সিআইডি জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে ১৮ বার এই অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছে। কিন্তু কোনও উত্তর আসেনি।”
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি ২০২৩ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হলেও নির্বাচন কমিশন তথ্য দেয়নি। “ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সেইসব মানুষকে রক্ষা করছেন যারা গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে,” দাবি রাহুল গান্ধীর।
এটি রাহুল গান্ধীর দ্বিতীয় সাংবাদিক সম্মেলন এই ইস্যুতে। এর আগে ৭ আগস্ট তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশ করে নির্বাচন কমিশন ভোট চুরির কাজ করছে। তিনি দাবি করেছিলেন, বেঙ্গালুরুর মহাদেবপুরা কেন্দ্রে কংগ্রেসের ৪০ সদস্যের একটি টিম ছয় মাসের গবেষণায় ব্যাপক অনিয়মের সন্ধান পেয়েছে।
রাহুল জানান, শুধু কর্ণাটক নয়, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানাতেও একইভাবে ভোট চুরি হয়েছে।
রাহুল গান্ধীর এই নতুন অভিযোগে রাজনৈতিক মহলে ফের চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস মনে করছে, ভোটার তালিকা নিয়ে প্রমাণিত কারচুপি সামনে এলে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে দেশের মানুষের আস্থা বড় ধাক্কা খাবে। অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন ও বিজেপি এই অভিযোগ খারিজ করে ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলছে।

