নয়ডায় ভুয়ো থানা কাণ্ডে গ্রেফতার সুপুত্র বিভাস অধিকারীর আরও কুকীর্তি ফাঁস। খাস কলকাতার বুকেও প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন বীরভূম জেলার নলহাটি ২ ব্লকের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি। যদিও অনুব্রত ঘনিষ্ঠ এই নেতাকে ২০২১ সালে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। নয়া কুকীর্তি উঠে এসেছে বেলেঘাটা থানা এলাকার সিআইটি রোডে ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাট বাড়িতে বসে প্রতারণা চক্র চালানোর।
বুধবার বেলেঘাটা থানার উল্টোদিকে গ্রেফতার অভিযুক্তদের ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালাতে এসে বাধার মুখে পড়েছে উত্তরপ্রদেশের নয়ডা থানার পুলিশ। অভিযোগ, বেলেঘাটা থানার পুলিশ তালাবন্ধ ফ্ল্যাটের চাবি না থাকার কথা তুলে তালা ভাঙতে বাধা দিয়েছে। তবে শিয়ালদহ কোর্টের হস্তক্ষেপে নির্বিঘ্নে তদন্তকারী দলের সদস্যরা তাদের তল্লাশি অভিযান শেষ করেছেন।
তদন্তকারীদের দাবি, গত জুলাই মাসে বেলেঘাটার সিআইটি রোডের ফ্ল্যাটে একটি নকল থানা খুলেছিলেন ধৃত বিভাস অধিকারী। বাবা বিভাস ও ছেলে অর্ঘ্য অধিকারী সেখানে ‘ন্যাশনাল ব্যুরো অফ সোশ্যাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড জাস্টিস’ নামে ফেক থানা খোলেন। বড় বড় হোর্ডিংয়ের আড়ালে যেখানে আদতে চলত দুর্নীতির কারবার। কাচের দরজায় লাগানো ছিল ‘US ইন্টারপোল’ স্টিকার। সেই স্টিকার নিজেদের গাড়িতেও ব্যবহার করতেন অভিযুক্তরা। নয়ডায় গ্রেফতারির পরপরই রাতারাতি উধাও হয়েছে সেই সমস্ত হোর্ডিং ও স্টিকার।
তদন্তের স্বার্থে তালাবন্ধ সেই ফ্ল্যাটেই তল্লাশি অভিযানে এসেছিল নয়ডা থানার তদন্তকারী একটি দল। দলের সদস্যরা বেলেঘাটা থানার পুলিশকে নিয়ে তল্লাশি অভিযানে যাওয়ার পরপরই বিতর্ক ও উত্তেজনার সূত্রপাত। অভিযোগ, তালা ভাঙার সিদ্ধান্ত ঘিরে উভয়পক্ষের মতবিরোধ দেখা দিলে উত্তেজনাকর পরিস্থিত তৈরি হয়। নয়ডা পুলিশের দলটি শিয়ালদহ কোর্টের দ্বারস্থ হলে বিচারক জানান, স্থানীয় থানার তালা ভাঙতে আপত্তি থাকলে, তদন্তকারীরা আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন।
বিচারকের সেই পরামর্শ মেনে আবেদন করে তালা ভাঙার অনুমতি পেয়েছে তদন্তকারী দল। পরে বেলাঘাটা সিআইটি রোডের তালাবন্ধ ফ্ল্যাটের তালা ভেঙেই তল্লাশি অভিযান সম্পূর্ণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিভাস অধিকারী ও তার ছেলে অর্ঘ্য অধিকারী ছাড়াও নয়ডা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল বাবুলচন্দ্র মণ্ডল, পিন্টু পাল, সমাপদ মাল, আশিস কুমারকে। এরা সকলেই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
বীরভূম জেলার নলহাটির তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি বিভাস অধিকারীর নাম শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতেও জড়িয়েছিল। কারাবন্দি পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে ২০২৩ সালে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই।