টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন টিম ইন্ডিয়া। অবস্থান র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। সেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলকেই কাঁদিয়ে ছাড়ল আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের ২০ নম্বরে থাকা ওমান। ২১ রানে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হলেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত অধিনায়ক যতিন্দর সিংয়ের দল যে কড়া টক্কর এদিন দিল তেমন টক্কর গত বছর বার্বাডোজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর থেকে ভারতকে আর কেউ দিতে পেরেছে কি না সন্দেহ।
টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটিংকে ১৮৮/৮ -এ আটকে রাখা নিঃসন্দেহে এক বড় কৃতিত্ব। তবে বোলারদের ছাপিয়ে এদিন স্পটলাইটের সবটুকুই কেড়ে নিয়েছেন ওমানের ব্যাটাররা। আরও স্পষ্ট করে বললে ওপেনার আমির কলিম (৬৪) এবং ৩ নম্বরে নামা হামাদ মির্জা (৫১)। জোড়া অর্ধশতরান হাঁকিয়ে দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে দুজনে যোগ করেন ৯৩ রান। শেষ কয়েক ওভারে দুজনের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে প্রয়োজনীয় সমীকরণটা এক সময় ছিল ১৪ বলে ৪০ রান। আধুনিক টি-টোয়েন্টির যুগে খুব কঠিন কি? বিশেষ করে, হাতে যেখানে ৯টা উইকেট।
বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের তখন রীতিমতো দিশাহারা লাগছে। কমেন্ট্রি বক্সে বসা ধারাভাষ্যকাররা এমনকি এ কথাও বলছেন যে, ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটে দলগুলির মধ্যেকার পার্থক্য অনেকটাই কমে আসে। তাই অঘটন এই ফরম্যাটে খুবই সম্ভব। হ্যাঁ, অঘটন প্রায় ঘটিয়েই ফেলেছিলেন ওমানের দুই টপ অর্ডার ব্যাটার। কলিম-মির্জার বেধড়ক লাঠিচার্জ পেন্ডুলাম দোলাতে শুরু করে দিয়েছিল মেন ইন ব্লু-র সমর্থকদের বুকে। ঠিক তখনই ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে হার্দিক পাণ্ডিয়ার অবিশ্বাস্য ক্যাচ লিখল কাহিনির ক্লাইম্যাক্স।
বার্বাডোজের ফাইনালে হার্দিকের লোপ্পা ফুলটসে বাউন্ডারি লাইনে ডেভিড মিলারের অবিশ্বাস্য ক্যাচ ধরে দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন সূর্যকুমার যাদব। এদিন যেন ছিল হার্দিকের ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। বাউন্ডারিতে অনেকটা দৌড়ে এসে শরীরটা রীতিমতো শূন্যে ভাসিয়ে, আবার সেই সঙ্গে ভারসাম্যও বজায় রেখে অবিশ্বাস্য ক্যাচ নেন তিনি। এই এক ক্যাচেই র্যাঙ্কিংয়ের ২০ নম্বরে থাকা ওমানের বিরুদ্ধে অধিনায়ক সূর্যর মুখ শেষ পর্যন্ত পুড়তে দিলেন না হার্দিক। পচা শামুকে পা কাটতে কাটতেও বাঁচল টিম ইন্ডিয়া।
অবশ্য এই জয়েও কি আর ঠেকানো যাবে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আধিপত্য নিয়ে ওঠা প্রশ্নটা? এদিন মোট ৮ জনকে দিয়ে বল করিয়েছেন সূর্যকুমার। ভারতের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে যা রেকর্ড হয়ে থাকল। কিন্তু তার পরেও ভারতীয় বোলারদের কারও শরীরী ভাষাতেই লক্ষ্য করা যায়নি ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছাপ। প্রতিপক্ষ দুগ্ধপোষ্য ওমান বলেই কি এ হেন ছবি? থাকছে সেই প্রশ্নও। এদিকে এরই মধ্যে ক্যাচ নিতে গিয়ে মাথায় চোট পেলেন অক্ষর প্যাটেল। তাঁর চোট কতটা গুরুতর তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও চোট পেয়ে তৎক্ষণাৎ মাঠ ছাড়েন তিনি।
সব মিলিয়ে রবিবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে নামার আগে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এই মুহূর্তে হঠাৎ করেই কিছুটা ব্যাকফুটে। সলমন আঘাদের মুখোমুখি হওয়ার আগে ওমানের বিরুদ্ধে হতশ্রী পারফরম্যান্স একদিকে যেমন চিন্তায় রাখবে গুরু গম্ভীরকে, অন্যদিকে চিন্তা থাকবে অক্ষরকে নিয়েও। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অক্ষর খেলতে পারবেন কি? প্রথমে ক্যাচ মিস, তার পর শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে অক্ষরের মাটিতে পড়ে মাথার পিছনে চোট পাওয়ার, এই একটি ঘটনাই যেন ইমেজারি হয়ে রইল টিম ইন্ডিয়ার এদিনের কুৎসিত ক্রিকেটের।
অবশ্য সব খারাপের মধ্যেই কিছু না কিছু ইতিবাচক দিক থাকে। এদিন ভারতীয় বোলিংয়ের একমাত্র ইতিবাচক দিক হল, অর্শদীপ সিংয়ের ১০০ উইকেট। জশপ্রীত বুমরাহ বিশ্রাম নেওয়ায় এদিন শিকে ছিঁড়েছিল অর্শদীপ এবং হর্ষিত রানার। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রথম ভারতীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেট নেওয়ার নজির গড়লেন অর্শদীপ। অন্যদিকে রানার ঝুলিতেও একটি উইকেট। যদিও সব মিলিয়ে দুগ্ধপোষ্য ওমানের মাত্র ৪টি উইকেটই তুলতে পারলেন ভারতীয় বোলাররা। বিনিময়ে খরচ করতে হল ১৬৭ রান।
