সিঙ্গাপুরে ভয়াবহ স্কুবা ডাইভিং দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন অসমের জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গর্গ। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে। ৫২ বছর বয়সী জুবিনকে সিঙ্গাপুর পুলিশ সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে চিকিৎসকদের চেষ্টার পরও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
জুবিন গর্গ সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন নর্থ ইস্ট ফেস্টিভাল উপলক্ষে, যা আয়োজন করেছিল গুয়াহাটির সংস্থা ট্রেন্ডস এমএমএস। শুক্রবার রাতেই তাঁর মঞ্চে পারফর্ম করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই জুবিনের আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে অসম সহ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতে। সামাজিক মাধ্যমে ভক্ত ও সহশিল্পীরা শোক প্রকাশ করছেন, শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন “অসমের হার্টথ্রব”কে।
১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর মেঘালয়ের তুরায় জন্ম জুবিনের। বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক জুবিন মেহতার নামে তার নামকরণ করা হয়। জুবিন ছিলেন গায়ক, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, কবি এবং সমাজসেবক।
চার দশকের কেরিয়ারে তিনি ৪০টিরও বেশি ভাষা ও উপভাষায় প্রায় ৩৮,০০০ গান রেকর্ড করেছেন। অসমীয়া, বাংলা ও বলিউড সংগীতে তাঁর অবদান ছিল অনন্য। তাঁর গানে লোকগীতি ও রক সঙ্গীতের মিশ্রণ, অনন্য মঞ্চ-উপস্থাপনা এবং ১২ ধরনের বাদ্যযন্ত্রে পারদর্শিতা তাঁকে বিশেষ করে তুলেছিল।
মাত্র তিন বছর বয়সে গান শেখা শুরু করেন মায়ের কাছে। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে পণ্ডিত রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তবলা শিখেছেন। গুরু রমনী রায়ের কাছে শিখেছেন অসমীয়া লোকগীতি।
স্কুল জীবনে গান রচনা শুরু করেন এবং আটের দশকের শেষদিকে তৈরি করেন তার প্রথম রক ব্যান্ড “বুম বুম”, যেখানে তিনি অসমিয়া লোকসঙ্গীতের সঙ্গে রকের মিশ্রণ ঘটান। তামুলপুর হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। বি বড়ুয়া কলেজে বিএসসি-তে ভর্তি হলেও সঙ্গীতে মনোনিবেশ করার জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দেন।
২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছোট বোন জংকি বড়ঠাকুর, যিনি নিজেও অভিনেত্রী ও গায়িকা ছিলেন, তেজপুরের কাছে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। তার স্মরণে জুবিন প্রকাশ করেছিলেন অ্যালবাম “জিহু”।
জুবিন গর্গ ছিলেন অসমের সর্বাধিক পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত গায়ক, একই সাথে নবীন শিল্পীদের প্রেরণাদায়ক, মেন্টর ও বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে সক্রিয় কণ্ঠস্বর।
জুবিন গর্গের হঠাৎ প্রয়াণে অসম হারাল তার সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক আইকনকে। ভক্তদের কাছে তার গানই রয়ে যাবে অনন্ত স্মৃতি।