গত মে মাসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অসুস্থতা নিয়েই তিনি নতুন অসমিয়া ছবি ‘ভাইমন দা’-এর প্রিমিয়ারে ছিলেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি আচমকাই পেটে ব্যথা অনুভব করেন। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এবার গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুর। নর্থ ইস্ট ফেস্টিভালে। স্কুবা ডাইভিং করার সময় শ্বাসকষ্ট শুরু হয় গায়কের। আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। শোকপ্রকাশ করে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, “অসমের বড় ক্ষতি। ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না জ়ুবিন আমাদের কাছে কী ছিল। যে শূন্যস্থান রেখে গেল তা পূরণ করা অসম্ভব।” তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বিনোদন দুনিয়া। দুঃখপ্রকাশ করেছেন সঙ্গীত পরিচালক জিৎ গাঙ্গলি, অভিনেতা রাহুল।
জুবিন গর্গ : জীবন ও কর্মজীবনের কালানুক্রম (১৯৭২–২০২৫)
শৈশব ও শিক্ষা
১৮ নভেম্বর, ১৯৭২ : মেঘালয়ের তুরা শহরে জন্ম।
পিতা : মোহিনী মোহন বরঠাকুর (গীতিকার, সংগীতপ্রেমী)
মাতা : ইলি বরঠাকুর (শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী)
ছোটবেলা থেকেই সংগীতের পরিবেশে বেড়ে ওঠা।
৩ বছর বয়সেই গান গাইতে শুরু করেন।
তবলার শিক্ষা নেন পণ্ডিত রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রায় ১১ বছর ধরে।
গুরু রমণী রায় তাকে অসমীয়া লোকসঙ্গীতের সঙ্গে পরিচয় করান।
কৈশোর ও সংগীতের সূচনা
১৯৮০-র দশকের শেষের দিকে : স্কুলে পড়াকালীন নিজের প্রথম ব্যান্ড “বুম বুম” গঠন করেন।
লোকসঙ্গীতের সঙ্গে রক মিলিয়ে নতুন ধারার পরীক্ষামূলক গান তৈরি শুরু।
তামুলপুর হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক।
পরে বি বড়ুয়া কলেজ, গুয়াহাটি-তে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা। কিন্তু সংগীতকে জীবনব্রত হিসেবে বেছে নিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেন।
পেশাদার সংগীতজীবনের শুরু
১৯৯২ : প্রথম অ্যালবাম “অনামিকা” মুক্তি পায়। অসমে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
১৯৯০-এর দশক : একাধিক অসমিয়া, বাংলা ও হিন্দি অ্যালবামে কণ্ঠ দেন।
অসমীয় যুবসমাজের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন আইকন।
বলিউডে সাফল্য
২০০৬ : ফিল্ম গ্যাংস্টার-এর গান “ইয়া আলি” তার কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
গানটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনপ্রিয়তা পায়।
এর পর তিনি বলিউডে একাধিক হিট গান উপহার দেন।
পাশাপাশি অসমিয়া ও বাংলা চলচ্চিত্র জগতে গাওয়া অব্যাহত রাখেন।
সৃজনশীল বহুমুখিতা
সংগীতশিল্পী ছাড়াও ছিলেন গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, অভিনেতা, প্রযোজক ও চলচ্চিত্র পরিচালক।
৩৮,০০০-এরও বেশি গান রেকর্ড করেছেন ৪০টিরও বেশি ভাষা ও উপভাষায়।
১২টি বাদ্যযন্ত্রে দক্ষতা ছিল তার।
চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, অসমিয়া সিনেমার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
অসমরত্ন – রাজ্যের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান।
ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড (ইস্ট) – একাধিকবার শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে।
ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড – প্লেব্যাক সিঙ্গিংয়ে অবদান রাখার জন্য।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিবেশনা করে অসমিয়া সঙ্গীতকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেন।
সমাজসেবামূলক কাজ
পরিবেশ সংরক্ষণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার প্রচারে সক্রিয় ছিলেন।
নবীন শিল্পীদের মেন্টরিং ও উৎসাহিত করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
বিভিন্ন দাতব্য প্রকল্প ও কনসার্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫ : ৫২ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে এক স্কুবা ডাইভিং দুর্ঘটনায় মৃত্যু।