সমগ্র বিশ্বজুড়ে ক্রমশই বাড়ছে অ্যালজাইমার্স বা ডিমেনশিয়া অর্থাৎ স্মৃতিভ্রংশতার রোগ। দৈনন্দিন জীবনের চাপ, ঘরে ও বাইরে ইঁদুর দৌড়। এছাড়া মস্তিষ্কের নিউরো ট্রান্সমিটারে সমস্যা এবং আরও বেশ কিছু কারণে ডিমেনশিয়ার রোগীদের সংখ্যা বিগত কয়েক বছরে উল্লেখজনক হারে বেড়েছে ।সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথা হু জানিয়েছে ডায়েটে কিছু পরিবর্তন আনলে ডিমেনশিয়ার বাড়বাড়ন্ত আটকানো সম্ভব। তবে হ্যাঁ ডায়েট দিয়ে শুধুমাত্র ডিমেনশিয়াকে সারিয়ে তোলা সম্ভব না। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার বদলে তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে ডায়েট। আর এই জন্যই হু -এর তরফ থেকে ভূমধ্যসাগরীয় ডায়েট বা মাইন্ড ডায়েটের কথা বারবার তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি ,ফল, দানাশস্য, মাছ। রান্না করা হয় অলিভ অয়েলে। নুন , চিনির পরিমাণ অনেকটাই কম রাখা হয় ।
তবে জানেন কি ঘরোয়া কয়েকটি খাবারের মাধ্যমে দূরে সরিয়ে রাখা যায় ডিমেনশিয়াকে? কী কী একবার সেদিকেই চোখ বোলানো যাক।
১.হলুদ ও গোলমরিচ
এক্ষেত্রে প্রথমেই যে খাবারদুটির নাম বলব তা আমাদের রান্নাঘরে নিত্যদিনের ব্যবহার্য। হ্যাঁ। হলুদ। সঙ্গে একটু গোলমরিচের গুঁড়ো। এই দুটি একসঙ্গে ব্যবহার করলে সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। হলুদের মধ্যে থাকে বায়োঅ্যাক্টিভ প্রোডাক্ট কারকিউমিন যা শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং এর মধ্যে আছে উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার ফলে শরীরের ফ্রি রেডিকেলসগুলি দূর হয়ে যায়। ডিমেনশিয়া হলে মস্তিষ্কের কোষে এই ফ্রি রেডিকেলসগুলো জমতে থাকে যাকে দূর করে হলুদ। স্বল্প পরিসরে হওয়া একটি সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে ডিমেনশিয়ার যেসকল রোগীদের মাইল্ড কগনিটিভ সমস্যা আছে তারা যদি নিয়মিত হলুদ ও গোলমরিচ খান তাহলে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই রোগীর বাড়বাড়ন্ত হয় না। হলুদের সঙ্গে যদি গোলমরিচ মেশানো হয় তাহলে কারকিউমিনের কার্যকারিতা অনেকাংশই বেড়ে যায় ।
২.চিনেবাদাম ও আখরোট-
ভারতে যে বিভিন্ন ধরনের বাদাম পাওয়া যায় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেলে চিনেবাদাম। এই চিনেবাদাম ও আখরোটের মধ্যে আছে প্রয়োজনীয় পরিমাণে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ভিটামিন ই ও পলিফেনলস। বেশ কয়েকটি সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রতিদিন যদি চিনেবাদাম ও আখরোট খাওয়া হয় তাহলে মস্তিষ্কের কগনিটিভ ক্ষমতা অর্থাৎ কিনা চিন্তাশক্তি ও চেতনার শক্তির অনেকাংশে উন্নতি ঘটে বিশেষ করে বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই এই ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় যখন, তখন এগুলি দরকার। তবে খেতে হবে নুন ছাড়া। রোজ যদি একমুঠো করে চিনেবাদাম ও আখরোট খাওয়া যায় তাহলে ডিমেনশিয়াকে অনেক অংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
৩.;দানাশস্য
দেশীয় দানাশস্য বিশেষ করে চানা, মুগডাল, রাজমা, তরকা এগুলির মধ্যে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিন যা রক্তশর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং হার্টের স্বাস্থ্য রাখে সুরক্ষিত। এই দুটো মিলে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় । সেই জন্য হু-এর তরফ থেকে বলা হয়েছে প্রতিদিনের ডায়েটে যেন একবাটি করে ডাল থাকে।
৪.দই
সুইডেনে হওয়া একটি সমীক্ষা প্রমাণ করেছে যে দইয়ের মধ্যে থাকে প্রোবায়োটিক উপাদান যা ডিমেনশিয়ার রোগীদের মধ্যে কগনিটিভ ক্ষমতার ক্ষয় হওয়া অনেকাংশে আটকায় । ডিমেনশিয়া যাদের হয়েছে তাদের সাপ্লিমেন্ট থেকে মাইক্রোবায়োম খাওয়া অত্যন্ত জরুরি আর এটা পাওয়া যায় প্রতিদিন ঘরে পাতা একবাটি টক দই থেকে। তবে চিনি মিশিয়ে খাবেন না তাহলে উপকারিতা মিলবে না।
৫.হোলগ্রেনস
দেশীয় হোলগ্রেনস যেমন রাগি, বাজরা, মিলেট ,জোয়ার এগুলি শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবারের যোগান দেয় এবং শরীরের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স উন্নত করে । একটি সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে মিলেট শরীরে ফাস্টিং ব্লাড সুগার কমাতে যেমন সাহায্য করে তেমনি ব্লাড সুগারের তিন মাসের গড় মানে এইচ বি এ1সি নিয়ন্ত্রণে রাখার সহায়ক। গবেষকরা বলেন, ডায়াবেটিস ডিমেনশিয়ার অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর কাজেই ডায়াবেটিসকে যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাহলে ডিমেনশিয়ার বাড়ন্ত হবে না। সেজন্য তারা হোলগ্রেনস খাবার খেতে বলেন তার বদলে সাদা ভাত ময়দার তৈরি রুটি খাদ্য তালিকা থেকে একেবারেই বাদ দিতে হবে।
৬. বিভিন্ন ধরনের বীজ-
তিলের বীজ, ফ্ল্যাক্স সিডস ইত্যাদি ডায়েটে রাখলে ডিমেনশিয়া অনেকটাই কমে। ফ্ল্যাক্স সিডস -এ আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আর তিসির বীজে আছে ভিটামিন ই ও পলিফেনোলস। এগুলি শরীরের কারডিও মেটাবলিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। যা মোটের ওপর ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনা কমায় ।
৭. পাতাযুক্ত সবুজ সবজি-
বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক,বাঁধাকপি লেটুস এগুলি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে যেমন একদিক থেকে সুরক্ষা দেয় তেমনি অন্যভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে করে মজবুত। আর সেজন্যই ভূমধ্যসাগরীয় ডায়েটের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এই পত্রল সবজি ।ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গবেষণায় দেখা গেছে মস্তিষ্কের কগনিটিভ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এই ধরনের সবজিগুলো।
তবে ডিমেনশিয়ার বড় সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরী।