ভারতীয় সেনার অপারেশন সিন্দুরে নিহত মাসুদ আজহারের ভাই ইউসুফ আজহারের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর একটি স্মরণসভা করার পরিকল্পনা করছে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদ। এমনটাই জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র।
সূত্রের দাবি, সভাটি অনুষ্ঠিত হবে পেশোয়ারের মারাকাজ শহিদ মাকসুদাবাদে, যেখানে জৈশের শীর্ষ কমান্ডার ও সদস্যরা উপস্থিত থাকবে। শুধু তাই নয়, এই সভাকে নতুন সদস্য সংগ্রহের প্রচার সভা হিসেবেও ব্যবহার করবে সংগঠনটি। আন্তর্জাতিকভাবে ধরা না পড়তে জৈশ এবার ছদ্মনাম “আল-মুরাবিতুন” ব্যবহার করবে। আরবিতে এর অর্থ, “ইসলামের ভূমির রক্ষাকর্তা”।
ইউসুফ আজহার ছিলেন জৈশ প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজহারের ভাই। তিনি এবং তার পরিবারের আরও ১০ জন সদস্য ভারতের সেনা অভিযানে মারা যান। পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে জৈশের সদর দফতর জামিয়া মসজিদ সুভান আল্লাহ-তে ভারতীয় বিমান হামলার সময় তাঁদের মৃত্যু হয়। এই অভিযানটি চালানো হয়েছিল ২২ এপ্রিলের পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার জবাবে। এই মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন স্বয়ং মাসুদ আজহার।
মাসুদ আজহার পুলওয়ামা ও উরি হামলার মূলচক্রী। এই হামলায় ৫৯ জন ভারতীয় সেনা শহিদ হন, এছাড়াও সংসদে হামলা ও ২৬/১১ মুম্বই হামলার সঙ্গেও যুক্ত মাসুদ আজহার। তাকে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ২০১৯ সালে “গ্লোবাল টেররিস্ট” ঘোষণা করে।
পাকিস্তান সরকার এখনও দাবি করে, আজহার “অজ্ঞাত স্থানে” রয়েছেন। অথচ গত বছর নভেম্বর মাসে তিনি প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের এক মাদ্রাসায় বক্তৃতা দেন এবং আরও সন্ত্রাসবাদী হামলার হুমকি দেন।
আজহারের বিবৃতিতে নিহতদের তালিকা অনুযায়ী তাঁর বড় বোন ও বোনের স্বামী, এক ভাইপো ও তার স্ত্রী, এক ভাইঝি, পাঁচ শিশু, প্রিয় ভাই হুজাইফা এবং তার মা, আরও দু’জন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ভারতের হামলায় নিতহ হয়েছেন।
আজহার লিখেছেন, “আজ রাতে আমার পরিবারের দশজনকে আল্লাহ সুখে রাখলেন… তাদের মধ্যে পাঁচজন নিষ্পাপ শিশু, আমার বড় বোন ও তার স্বামী, আমার ভাতিজা ফাজিল ও তার স্ত্রী, আমার স্নেহের ভাতিজি ফাজিলাহ, আর আমার প্রিয় ভাই হুজাইফা ও তার মা। আরও দুই সঙ্গী।”
এই মৃত্যুর ঘটনা এক ভিডিয়ো বার্তায় নিশ্চিত করেছে জৈশের এক কমান্ডার। ভিডিয়োটি প্রমাণ করে, পাকিস্তান এখনও সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছে এবং ভারতবিরোধী হামলায় সহায়তা করছে। ভারত সরকার বলেছে, অপারেশন সিন্দুর চলাকালীন বেসামরিক হতাহতের জন্য দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে। তবে জোর দিয়ে জানানো হয়েছে, সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে সীমিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছিল। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত, সরাসরি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, আরও খবর এসেছে যে জৈশ ও হিজবুল মুজাহিদিন সহ অন্যান্য গোষ্ঠী, যারা অপারেশন সিন্দুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তারা এখন পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের গভীরে নতুন ঘাঁটি গড়ে তুলছে। ইউসুফ আজহার ও পরিবারের মৃত্যু ঘিরে জৈশ একদিকে স্মরণসভা করবে, অন্যদিকে নতুন সদস্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালাবে, এবং পাকিস্তান সরকারের “অজ্ঞাত” দাবি সত্ত্বেও মাসুদ আজহার আবারও প্রকাশ্যে সক্রিয় রয়েছেন।