কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিক একসময় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো সূত্রে খবর, ঘটনাটি ২০১৩ সালের, যখন জম্মু-কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন তীব্র অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।
গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, ২০১২ সালে আইএসআই-এর নির্দেশে লস্কর জঙ্গি হিলাল দারকে দায়িত্ব দেওয়া হয় মালিককে মারার জন্য। সে শ্রীনগরে এসে মাইসুমার মকবুল মঞ্জিলে মালিকের বাসভবনের ভিডিয়ো রেকি পর্যন্ত করেছিল। পাকিস্তান সন্দেহ করছিল, মালিক গোপনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। এর আগে মালিকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মৌলভি শওকত একটি সাইকেল-বোমা বিস্ফোরণে নিহত হওয়ায় আইএসআই-এর অবিশ্বাস আরও বেড়েছিল।
কিন্তু ২০১২ সালের শেষ দিকে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ হিলাল দারকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে, আইএসআই-লস্কর যৌথভাবে মালিককে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল কারণ তাঁকে ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল।
২০১৩ সালে সংসদ হামলায় দোষী আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়ার সময় মালিক পাকিস্তানে ছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করেন, যেখানে লস্কর-প্রধান হাফিজ সইদও যোগ দেন। সূত্রের দাবি, সেখানেই মালিক গোপনে সইদের কাছে প্রাণভিক্ষা চান এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে আর কখনও ভারতীয় গোয়েন্দাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন না, বরং আইএসআই-এর নির্দেশই মেনে চলবেন।
পাকিস্তান থেকে ফেরার পর ভারত সরকার মালিকের পাসপোর্ট বাতিল করে। তাঁর স্ত্রী মুশাল মালিক, যিনি পাকিস্তানি নাগরিক, তাকেও ভিসা দেওয়া হয়নি। এরপর মালিক সইদ আলি শাহ গিলানি ও মিরওয়াইজ উমর ফারুকের সঙ্গে জয়েন্ট রেসিস্ট্যান্স লিডারশিপ গঠন করেন। এই প্ল্যাটফর্ম থেকেই উপত্যকাজুড়ে হরতাল, বিক্ষোভ, পাথরবাজি ও স্কুলে হামলার ডাক দেওয়া হয়, যা কাশ্মীরকে দীর্ঘ সময় ধরে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেয়।
২০১৭ সালে এনআইএ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযান চালিয়ে একাধিক নেতা ও দালালকে গ্রেফতার করে। ২০১৯ সালে কেন্দ্র জেকেএলএফকে নিষিদ্ধ করে এবং মালিককে গ্রেফতার করে দিল্লির তিহার জেলে পাঠায়, যেখানে তিনি এখনও বন্দি।
এই তথ্যপ্রকাশে স্পষ্ট হয়েছে, একসময়ের কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার মরিয়া টিকে থাকার প্রচেষ্টা এবং কাশ্মীরের দীর্ঘ অস্থিরতার আড়ালে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার গভীর প্রভাব।