একদিকে সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা তথা প্রদোষ চন্দ্র মিত্র, অন্যদিকে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ বক্সি। সত্যান্বেষী দুই গোয়েন্দা চরিত্র এবার সদলে চলে এসেছেন কলকাতা সর্বজনীন দুর্গাপুজোর মণ্ডপ সজ্জায়। বালিগঞ্জ ৭১ পল্লী বৈশাখী সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি যখন সোনার কেল্লাকে থিম করে মণ্ডপ সহ আশপাশের এলাকাকে সাজিয়েছে, তখন দমদম পার্ক তরুণ সংঘে দুর্গাসুন্দরীর খোয়া যাওয়া কণ্ঠহার খুঁজতে ব্যস্ত সত্যান্বেষী বোম্যকেশ।
বাঙালির শারদোৎসবে এক নম্বরে স্থান দুর্গাপূজার। আর সেই দুর্গাপূজাকে ঘিরে বৃহত্তর কলকাতার প্রতিটি পাড়ায় থাকে নিত্যনতুন থিমের চমক। বালিগঞ্জ ৭১ পল্লীর পুজোয় দেখা যাবে জয়সলমিরের সেই বিখ্যাত কেল্লা। সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লা ফিল্ম রিলিজ করেছিল সেই ১৯৭৪ সালে। কমবেশি ৫১ বছর আগের সেই সোনার কেল্লাকেই দুর্গাপুজোর থিম করেছে বৈশাখী সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি।
মণ্ডপ সজ্জার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিল্পী রাজু সরকার প্যান্ডেলে কেল্লার ৬০ ফুট উঁচু প্রাচীর পুনর্নির্মাণ যেমন করেছেন, তেমনি সিনেমার দৃশ্য, চরিত্র এবং সংলাপগুলি ক্যানভাসে চিত্রিত করেছেন। ফলে খুব সহজেই কিশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সোনার কেল্লা পড়া বা দেখার স্মৃতি জাগিয়ে তুলবে।
ফেলুদা–তোপসে–জটায়ু–মুকুল দের সেই দুর্ধর্ষ অ্যাডভেঞ্চারের ঝলক অনুভব করা যাবে এই পুজো মণ্ডপে হাজির হলে। শুধু মণ্ডপই নয়, পুজোয় গোটা পাড়াটাই সাজানো হচ্ছে ‘রাজস্থানের আটশো বছরের পুরোনো ভাট্টি রাজাদের কেল্লা ও শহর’ জয়সলমিরের আদলে।
ফিল্মের মুকুল সেখানে নিজেদের বাড়িটা দেখতে পাওয়ার আগে যেমন ‘রতনের বাড়ি’,‘গিরিধারীর বাড়ি’ এবং যেখানে ওরা হোলি খেলত, সেই জায়গাটা দেখিয়েছিল, বালিগঞ্জ ৭১ পল্লিতে দেখা যাবে সেই সব বাড়ি আর জায়গাগুলি। গোটা পাড়াই সাজানো হচ্ছে ‘সোনার কেল্লা’–র আদলে।
তাঁদের ৫৯ বছরের পুজোর থিম নিয়ে রীতিমতো উত্তেজিত পুজো কমিটির সদস্যরা। বলেছেন পাড়ার বিভিন্ন জায়গায় এবং মণ্ডপে দেখা যাবে ছবির বিভিন্ন চরিত্রের কাটআউট। এ ছাড়াও মণ্ডপে থাকবে সেই ট্রেনের একটা মডেল, যে ট্রেনকে ফেলুদারা উটের পিঠে চেপে তাড়া করেছিল। কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, সত্যজিৎ রায়ের অসামান্য ওই সৃষ্টির আবহ যাতে পুরোপুরি বজায় থাকে, তার জন্যে সিনেমার ক্রেডিট টাইটেলের মতো ছবি দিয়ে মণ্ডপ সাজানো চলছে।
অন্যদিকে, দমদম পার্ক তরুণ সংঘ তাদের ৪০ তম বর্ষের পুজোয় বেছে নিয়েছে বাঙালি গোয়েন্দা চরিত্র, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ কে। এদের মণ্ডপটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেটি দেখলে মনে হবে প্যান্ডেল হপাররা যেন একটি রহস্যভেদের অভিযানে সামিল হচ্ছেন। দুর্গাসুন্দরীর কণ্ঠহার চুরি হওয়ার এক কাল্পনিক গল্পকে কেন্দ্র করে সাজানো হচ্ছে পুরো মণ্ডপ। দর্শনার্থীরা এই রহস্যের জট ছাড়াতে ব্যোমকেশের সঙ্গী হচ্ছেন, এমনই ভাবনা শিল্পী অনির্বাণ দাসের।
শিল্পীর বক্তব্য, শরদিন্দুর ব্যোমকেশ চরিত্রটি সাধারণ বাঙালির জীবনের সঙ্গেই যেন মিশে আছে। তিনি শার্লক হোমস কিংবা ফেলুদার মতো কোনও ‘হিরো’ নন, বরং খুবই সাধারণ, সংসারী এবং বাস্তববাদী। দায়িত্ব পাওয়ার পর এই কারণেই ব্যোমকেশকে থিম হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
দমদম পার্ক তরুণ সংঘের মণ্ডপসজ্জায় পপ আর্ট এবং কমিকসের আদলে ব্যোমকেশের বিভিন্ন অভিযান তুলে ধরা হবে। ব্যোমকেশের বিখ্যাত গল্প যেমন ‘অর্থমনর্থম’, ‘মাকড়সার রস’, ‘আদিম রিপু’ ইত্যাদি বিষয়গুলিও কমিকসের মাধ্যমে প্রদর্শিত হবে। দর্শনার্থীরা মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে যেন ব্যোমকেশের নতুন একটি রহস্যের গল্প পড়তে পারবেন।