হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের অভিযোগ থেকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি) মুক্তি দেওয়ার পর আদানি গ্রুপ তাদের আগামী বৃদ্ধির রূপরেখা প্রকাশ করল। কর্মীদের উদ্দেশে এক বার্তায় আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি জানান, এখন থেকে প্রতিষ্ঠান আরও দ্রুত উদ্ভাবন ঘটাবে, স্বচ্ছতাকে শক্তিশালী করবে এবং দীর্ঘমেয়াদি মূল্যের জন্য কাজ করবে।
আদানি বলেন, “দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের ওপর যে মেঘ জমে ছিল, আজ তা কেটে গেছে। সেবি-র বিস্তৃত তদন্তে ২০২৩ সালের জানুয়ারির হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের সব অভিযোগই খারিজ করা হয়েছে।”
কর্মীদের মানসিক চাপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি এই বিতর্ককে “অগ্নিপরীক্ষা” বলে উল্লেখ করেন এবং কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “গত তিন বছরকে দেখুন একটি স্ফুলিঙ্গ হিসেবে, যা বৃহত্তর আদানি গোষ্ঠীকে গড়ে তুলেছে।”
ডিজিটাল ব্যাকগ্রাউন্ডে তিনি মহাভারতের গাণ্ডীব ধনুকের ছবি ব্যবহার করেন, যেটি অগ্নিদেব অর্জুনকে উপহার দিয়েছিলেন।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজি, হিসাব অনিয়ম এবং অফশোর সংস্থার মাধ্যমে অর্থ সরানোর অভিযোগ ওঠে। তাতে বাজার মূল্যে ১৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়। তবে আদানি গ্রুপ অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, এগুলো “বাছাই করা ভুল তথ্য”।
গত সপ্তাহে সেবি দুটি পৃথক আদেশে জানায়, আদানি গ্রুপে অর্থ সরানোর মতো কোনও সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেনের প্রমাণ মেলেনি। হিন্ডেনবার্গের যেসব চুক্তিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সেগুলোও ভারতীয় আইনে সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেন হিসেবে গণ্য হয় না।
আদানি এই ঘটনাকে বলেন “টার্গেটেড, বহুমাত্রিক আক্রমণ।”
তিনি কর্মীদের প্রশংসা করে বলেন, “বিশ্ব আমাদের নিয়ে বিতর্ক করলেও, আমাদের বন্দর বেড়েছে, বিদ্যুতের লাইন ছড়িয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল থেকেছে, পুনর্নবীকরণ যোগ্য শক্তি প্রকল্প এগিয়েছে, বিমানবন্দর উন্নত হয়েছে, সিমেন্ট কারখানা চালু থেকেছে, লজিস্টিক দল নিখুঁতভাবে কাজ করেছে।”
আদানি আরও যোগ করেন, “চাপের মধ্যে কাজ করার দক্ষতাই প্রকৃত চরিত্রের পরীক্ষা। আর আদানি চরিত্র ভাঙার নয়।”
আগামী দিনে তাঁর অগ্রাধিকার হবে— অটল স্বচ্ছতা, জ্বালানি ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে দ্রুত উদ্ভাবন, এবং দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকার সৃষ্টি। তিনি বলেন, “আজকের করতালির জন্য নয়, আমাদের সৃষ্টি করতে হবে এমন এক উত্তরাধিকার, যা দশকের পর দশক বেঁচে থাকবে। শিরোনাম মুছে যায়, কিন্তু আমরা যা সৃষ্টি করি, তাই ইতিহাসে থেকে যায়।”
গত এক দশকে আক্রমণাত্মকভাবে বহুমুখী খাতে বিস্তার ঘটানো আদানি গ্রুপ বিশ্ব বিনিয়োগকারী যেমন জিকিউজি পার্টনার্স এবং আবুধাবির ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোম্পানির সমর্থনে বাজারমূল্য পুনরুদ্ধার করেছে। পাশাপাশি ঋণ কমানোর পদক্ষেপও নিয়েছে। চলতি বছর এখনও পর্যন্ত আদানি এন্টারপ্রাইজেস-এর শেয়ার ৮০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, নিফটি ৫০ সূচককেও ছাড়িয়ে গেছে।
বার্তার শেষে অদানি লিখেছেন :
“সত্যমেব জয়তে, জয় হিন্দ।
ইতিহাস যেন গত তিন বছরকে মনে রাখে, বৃহত্তর আদানি গ্রুপ গড়ার স্ফুলিঙ্গ হিসেবে।”