জুলাই সনদ, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন, পি আর পদ্ধতি ইতাদি নিয়ে এই মুহূর্তে রাজনীতির এক জটিল মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে আজকের বাংলাদেশ। অনেক আগেই ঠিক হয়েছিল নির্বাচন হবে ফেব্রুয়ারিতেই। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার বার বার জানালেও যা পরিস্থিতি তাতে সব মিলিয়ে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সংশয় বাড়ছে। যা পরিস্থিতি এখন, বিএনপি এবং কয়েকটি ছোট বাম দল ছাড়া আর কেউই সম্ভবত আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন চাইছে না।
একটা সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছিলেন, বিএনপি ছাড়া কেউ তাৎক্ষণিক নির্বাচন চায় না। যদিও পরে তিনি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতায় পৌঁছন যে স্থানীয় নির্বাচন ছাড়াই ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন হতে পারে। ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে বিএনপি। বিপরীতে, অন্তর্বর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু দল, যেমন জামাত-ই-ইসলামি বাংলাদেশ এবং জুলাই আন্দোলনের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) এখনই নির্বাচন চায় না। কয়েকটি ইসলামি দলও তাৎক্ষণিক ভোটের বিপক্ষে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হল ক্রমেই সমর্থন বাড়ছে জামাত-ই-ইসলামির। ৯ সেপ্টেম্বর জামাতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বহুদিন ধরেই জাতীয় রাজনৈতিক আন্দোলনের কেন্দ্র। শুধু ডাকসুই নয়, ১০ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ বা জাকসু নির্বাচনে ২৫ পদের ২০টিতেই জিতেছে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল।
তারেক রহমান ছাত্র সংসদ নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না বলে জানালেও পরিস্থিতি অন্য কথা বলছে। এই জয় জামাতের দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তা বিএনপির জন্য একটি বড় ধাক্কা। জামাতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, জুলাই সনদকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়া না হলে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার না হলে কোনও নির্বাচন হওয়া উচিত নয়। জুলাই আন্দোলনের ছাত্র নেতারা প্রথম থেকেই জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনূস আগেই বলেছেন, স্থানীয় সরকারকে আরও বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে এবং এর প্রথম ধাপ হল স্থানীয় সরকার নির্বাচন। কাজেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে কি না সেটাই একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকের বাংলাদেশে।