২০ ওভারে ১৬৮। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে ঠিক এই স্কোরে পৌঁছেই শেষরক্ষা করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। সূর্যকুমার যাদবের দল কিন্তু আশাহত করল না সমর্থকদের। কুলদীপ, বরুণ, বুমরাহরা দেখিয়ে দিলেন কেন তাঁরা টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আগের দিন যে স্কোরে আটকে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, এদিন একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সেই একই স্কোরে আটকে গিয়েও ৪১ রানে জিতল ভারত। নিশ্চিত হল ফাইনালের টিকিট।
কিন্তু এই জয়েও কি নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন গুরু গম্ভীর? পাকিস্তান ম্যাচে ঝড় তোলার পর এদিন টাইগারদের বিরুদ্ধে পাওয়ারপ্লেতে ৭২ রান তোলেন অভিষেক শর্মা এবং শুভমান গিলের জুটি। কিন্তু এর পরেও ২০ ওভার শেষে মাত্র ১৬৮ অবধিই পৌঁছতে পারল মেন ইন ব্লু। অভিষেক শর্মার ৩৭ বলে ৭৫ এবং অতিরিক্ত ৪ রান বাদ দিলে বাকি ছয় ব্যাটারের অবদান মাত্র ৮৯। তা হলে কি আবার ফেরত আসছে কোহলিযুগ?
বিরাট কোহলি যখন কেরিয়ারের তুঙ্গে রয়েছেন, তখন তো এ ছবিই দেখা যেত বার বার। দলকে একা টানছেন তিনি। বাকিরা স্রেফ পায়ের ওপর পা তুলে বসে হাওয়া খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন তাঁরই ভরসায়। এবার কি কোহলির জায়গায় অভিষেক? না বলে উপায় নেই, চলতি এশিয়া কাপে সাক্ষী থাকতে হচ্ছে এমন দৃশ্যের। অভিষেক চললে টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিংও চলবে। তিনি থামলে দলও কুপোকাত। এদিনও ৬টি চার এবং ৫টি ছক্কায় সাজানো বিধ্বংসী ইনিংস খেলে যখন তিনি ফিরে যাচ্ছেন, তখন সবে ১১.১ ওভার। এর পরের ৫৩ বলে ভারত ৩ উইকেট খুইয়ে তুলল মোটে ৫৬।
বাংলাদেশ কি ভাবতে পেরেছিল, এর পরেও রানটা তোলা যাবে না? লক্ষ্যমাত্রা সেই তো ১৬৯, গত ম্যাচেই যা তাড়া করে জিতেছে তারা। রানটা যেখানে অন্তত ১৯০ হওয়ার কথা, সেখানে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ১৬৮-তেই বেঁধে রাখা মুখের কথা নয়। দুবাইয়ের মাঠ, যা দ্বিতীয়ার্ধে শিশিরের কারণে বোলারদের বধ্যভূমি হয়ে ওঠে, সেখানে জাকের আলিদের জিতে যাওয়ার কথা ছিল এখানেই। কিন্তু দলটির নাম বাংলাদেশ বলেই হয়ত তারা পারল না।
গোটা প্রতিযোগিতার মতো এদিনও কুলদীপ ছিলেন কার্যত অপ্রতিরোধ্য। ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। জশপ্রীত বুমরাহও একই ইকোনমিতে ২ উইকেট। এ ছাড়া বরুণ চক্রবর্তী এবং অক্ষর প্যাটেল পেয়েছেন যথাক্রমে দুটি এবং একটি উইকেট। কিন্তু এর মাঝেও ভারতীয় ফিল্ডাররা বজায় রাখলেন নিজেদের ফর্ম। চলতি টুর্নামেন্টে মোট ১২ টি ক্যাচ ফেলেছেন ভারতীয়রা। তার মধ্যে এদিনই ফেললেন ৫ টি। পদ্মাপারের দলের হয়ে একমাত্র লড়াই চালানো সাইফ হাসানকে (৬৯) মোট তিনবার জীবনদান শিবম-কুলদীপদের।
দেখে মনে হচ্ছিল, সূর্যকুমার এন্ড কোং যেন তাঁর উইকেট নিতে আগ্রহীই নয়। বরং ভাবখানা এমন, উল্টোদিকের পার্টনারগুলোকে পটাপট ফেলে দিই। তা হলে আর এ ব্যাটা একা কী করবে? শেষপর্যন্ত অবশ্য বুমরাহর বলে সাইফের ক্যাচ নিলেন অক্ষর। কিন্তু ছবিটা ততক্ষণে যা স্পষ্ট হওয়ার হয়েই গিয়েছে। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ বলেই হয়ত অন্তত ২০-৩০ রান কম করেও এবং পাঁচটি ক্যাচ ফেলেও জয় এল ৪১ রানে।
উল্টোদিকে অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড থাকলে কি এভাবে পার পাওয়া যেত? ফাইনালে তো উঠে গেলেন সূর্যরা। রবিবাসরীয় ফাইনালে হয়ত আরও একবার ভারত-পাক মহারণের সাক্ষী থাকতে চলেছে ক্রিকেট বিশ্ব। সেই ম্যাচেও এই একই ভুলগুলো করলে ছেড়ে দেবে তো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীরা? নিজেদের ত্রুটি শুধরে নিয়ে স্বমহিমায় ফিরে আসুন বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা, এই অপেক্ষাতেই এখন সমর্থকেরা।