প্রয়াতন পদ্মভূষণপ্রাপ্ত কন্নড় সাহিত্যিক ও দার্শনিক এস. এল. ভৈরপ্পা। ২৪ সেপ্টেম্বর বুধবার কর্নাটকের বেঙ্গালুরুর রাষ্ট্রীয়োত্তানা হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে ভৈরপ্পার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
হাসপাতালের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “ভারতের প্রখ্যাত সাহিত্যিক, দার্শনিক, পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ ও সরস্বতী সম্মানপ্রাপ্ত এস. এল. ভৈরপ্পা আজ দুপুর ২টা ৩৮ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরমেশ্বরের চরণে মিলিত হয়েছেন। ওঁ শান্তি।”
ভৈরপ্পা ২০১৫ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান। ২০১১ সালে তিনি সরস্বতী সম্মান, ২০১৬ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০২৩ সালে পদ্মভূষণ সম্মান লাভ করেন সাহিত্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য। ভৈরপ্পা ‘বংশবৃক্ষ’, ‘দাতু’, ‘পর্ব’, ‘মন্দার’ সহ বহু উল্লেখযোগ্য উপন্যাস লিখেছেন। তাঁর লেখা বেশিরভাগ বই ইংরেজি সহ অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। ‘নায়ী-নেরলু’, ‘মতাদান’, ‘বংশবৃক্ষ’, ‘তাব্বালিউ নীনাদে মাগনে’ উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। আবার ‘গৃহভঙ্গ’ ও ‘দাতু’ উপন্যাস টেলিভিশন সিরিজে রূপান্তরিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শোক প্রকাশ করে লিখেছেন,
“এস. এল. ভৈরপ্পা জির প্রয়াণে আমরা এক মহান ব্যক্তিত্বকে হারালাম, যিনি আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছিলেন এবং ভারতের আত্মার গভীরে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি ছিলেন এক নির্ভীক ও চিরকালীন চিন্তাবিদ। তাঁর রচনায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হয়েছে সমাজকে আরও গভীরভাবে বোঝার জন্য। ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা আমাদের আগামী দিনগুলোতেও অনুপ্রেরণা জোগাবে। তাঁর পরিবার ও ভক্তদের প্রতি সমবেদনা জানাই। ওঁ শান্তি।”
কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ. ডি. কুমারস্বামী বলেন, “পদ্মভূষণপ্রাপ্ত মহান সাহিত্যিক এস. এল. ভৈরপ্পার মৃত্যু আমার কাছে গভীর ধাক্কা। তাঁর ‘পর্ব’ ও ‘উত্তরকাণ্ড’ উপন্যাস মহাভারত ও রামায়ণের নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছে। আমি তাঁর লেখা অনেক পড়েছি এবং তাঁর চরিত্র নির্মাণের অসাধারণ দক্ষতায় মুগ্ধ হয়েছি। তিনি প্রকৃত ভারতীয় সাহিত্যিক, কর্নাটকে জন্ম নিয়েছিলেন এবং কন্নড় ভাষায় লিখেছিলেন। আমি গর্ব করি যে এই অমর প্রতিভার জন্ম হয়েছিল হাসান জেলায়। তাঁর মৃত্যুতে আমি ব্যক্তিগতভাবে শোকাহত। ঈশ্বর যেন তাঁর আত্মাকে শান্তি দেন এবং পরিবার ও ভক্তদের শক্তি জোগান।”
এস. এল. ভৈরপ্পার জীবন ও সাহিত্যকীর্তি ভারতীয় সাহিত্যে এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় থাকবে। তিনি শুধু কন্নড় সাহিত্যের সীমায় আবদ্ধ ছিলেন না, বরং তাঁর চিন্তা, দর্শন ও কলমের শক্তি সমগ্র ভারতের পাঠকসমাজকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাহিত্য জগতে।