নিজেকে একাধারে “ম্যানেজমেন্ট গুরু, বিশিষ্ট অধ্যাপক, লেখক, দার্শনিক” হিসেবে প্রচার করতেন দিল্লিভিত্তিক স্বঘোষিত গডম্যান চৈতন্যানন্দ সরস্বতী। অথচ, তাঁর মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে ছিল ছাত্রছাত্রীদের উপর একের পর এক যৌন হয়রানির অভিযোগ। এখন তিনি পলাতক। দিল্লি পুলিশ তাঁকে ধরতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
চৈতন্যানন্দের নাম একাডেমিক রিসার্চ শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে খুঁজলে দেখা যায় তিনি নাকি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ও পিএইচডি করেছেন। দাবি করেন একাধিক পোস্ট-ডক্টরাল ডিগ্রি ও সাতটি সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি তাঁর ঝুলিতে রয়েছে। তাঁর লেখা বইগুলির লেখক পরিচিতিতেও একই দাবির পুনরাবৃত্তি হয়েছে।
কিন্তু পুলিশের সন্দেহ, এসব দাবির অনেকটাই ভুয়ো। বইয়ের প্রচ্ছদে তিনি নিজেকে “আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত লেখক” বলে পরিচয় দিতেন। দাবি করতেন ২৮টি বই ও ১৪৩টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন।
তাঁর একটি বই ‘ফরগেট ক্লাসরুম লার্নিং’-এ স্টিভ জোবসের নামে ভূমিকাও ছাপা হয়েছে, যেখানে জোবসকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে— “চৈতন্যানন্দের বই ম্যানেজমেন্ট জগতের জন্য অভূতপূর্ব দিশারি।” অন্য বইয়ের প্রচারে দাবি করা হয়েছে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নির্বাচনী প্রচারে তাঁর লেখা ব্যবহার করেছেন এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রাক্তন মহাসচিব বান কি মুন নাকি তাঁর কাজের প্রশংসা করেছেন।
৬২ বছরের চৈতন্যানন্দ, যিনি পার্থসারথি নামেও পরিচিত, ছিলেন শ্রী শারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট-রিসার্চ (বসন্তকুঞ্জ, দিল্লি)-এর পরিচালক। এখানেই তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ উঠে আসে।
৩১ জুলাই এক প্রাক্তনী চিঠি লিখে অভিযোগ করেন, চৈতন্যানন্দ ছাত্রছাত্রীদের দীর্ঘদিন ধরে যৌন হয়রানি করে আসছেন। ১ আগস্ট এয়ার ফোর্সের শিক্ষা অধিদফতরের এক গ্রুপ ক্যাপ্টেন ই-মেইল করে জানান, বহু এয়ারফোর্স পরিবারের সন্তান ওই ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করে এবং তাদের মধ্যেও অভিযোগ রয়েছে।
এই অভিযোগের পরপরই ইনস্টিটিউটে পুলিশ যায় ও তদন্ত করে ৩০০ পাতার প্রমাণ জমা দেয়। পরে শিক্ষার্থীদের বয়ান রেকর্ড করা হয় এবং চৈতন্যানন্দের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়।
ছাত্রীরা অভিযোগ করেছে, রাতের বেলা তাদের ডেকে পাঠানো হত। মেয়েদের হস্টেলে গোপন ক্যামেরা বসানো হয়েছিল নিরাপত্তার অজুহাতে। বিদেশ সফরে সঙ্গে যেতে বাধ্য করা হত। আপত্তি করলে হুমকি দেওয়া হত যে তাঁদের ডিগ্রি ও নথি আটকে দেওয়া হবে।
এফআইআরে বলা হয়েছে, গোটা ইনস্টিটিউটেই এখন এক “ভয়ের পরিবেশ” তৈরি হয়েছে। যৌন হয়রানির অভিযোগের আগেই তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। বর্তমানে তিনি পলাতক, এবং তাঁর বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করা হয়েছে।