মধ্যসপ্তাহেই ভাটা পড়ল পুজোর কেনাকাটার উচ্ছ্বাসে। টানা বৃষ্টির জেরে শহরের বিভিন্ন বাজার প্লাবিত হওয়ায় মঙ্গলবার ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বুধবার জলের স্তর নেমে গেলেও গড়িয়াহাট, হাতিবাগান, নিউ মার্কেট কিংবা কলেজ স্ট্রিটের মতো জনপ্রিয় বাজারগুলিতে ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ জিনিসপত্র বিক্রি করতে পারেননি। কারণ তাঁদের বেশিরভাগ পুজোর স্টকই নষ্ট হয়ে গেছে বৃষ্টির জলে।
গড়িয়াহাটের এক হকার বলেন, “চার বস্তা জামাকাপড়ের স্টক ছিল পুজোর ভিড়ের জন্য, সবটাই ভেসে গেল। ভেজা জামাকাপড় কেউ কিনতে চাইছে না। ক্রেতারা শুধু ঘুরে যাচ্ছেন, কেউ কিনছেন না। এবারের পুজোয় আমরা বড় ক্ষতির মুখে পড়লাম।”
বালিগঞ্জ স্টেশনের কাছে গড়িয়াহাট বাজারের একাংশ বুধবারও কার্যত বন্ধই ছিল। এক ব্যবসায়ী জানালেন, “কাল দোকান খুলতে পারিনি। আজ খুলে দেখি সমস্ত স্টক জলে নষ্ট। ব্যবসার অবস্থা একেবারেই খারাপ।” হাতিবাগানেও একই চিত্র। এক হকার বলেন, “লোক আসছে বাজারে, কিন্তু ভিজে যাওয়া মাল কেউ কিনছে না। জিনিস শুকোয়নি, আমরা কী করব বুঝতে পারছি না।”
নিউ মার্কেটে বুধবারও ব্যবসার হাল খুব একটা ভাল ছিল না। এক হকার বলেন, “সব জামাকাপড় ভিজে গেছে। অন্তত ২৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। আজ ব্যবসা খুবই খারাপ।” একই হতাশার সুর শোনা গেল আরেক ব্যবসায়ীর গলাতেও। তিনি বলেন, “কাল কোনও ব্যবসা হয়নি। আজ কিছু ক্রেতা এলেও খুব একটা কেনাকাটা করেননি।”
কলেজ স্ট্রিটের অবস্থা আরও করুণ। এক বই ব্যবসায়ী বললেন, “মঙ্গলবার দোকান খুলে দেখি গোটা দোকানজুড়ে ভেজা বই। কোনও প্রস্তুতি ছিল না, কারণ আগে থেকে ভারী বৃষ্টি বা ঝড়ের সতর্কবার্তা পাইনি। প্রায় ৫০ শতাংশ স্টক নষ্ট হয়ে গেছে।”
কলেজ স্ট্রিটের দীর্ঘ ফুটপাত বুধবার বই শুকোনোর জায়গায় পরিণত হয়েছিল। রোদে সারি সারি ভিজে যাওয়া বই মেলে রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। আরেক বই বিক্রেতা বললেন, “জল গুদাম পর্যন্ত ঢুকে পড়েছিল। অন্তত ১০০টা বই নষ্ট হয়ে গেছে।” আরেকজন জানান, “যা শুকোনো সম্ভব, চেষ্টা করছি। তবে অনেক বই বাঁচানোই যাচ্ছে না।”
রবীন্দ্র সরণির জুতো ব্যবসায়ীরাও একইভাবে বিপর্যস্ত। এক ব্যবসায়ী বলেন, “জলের মধ্যে পড়ে সব জুতো ভিজে গেছে। সিন্থেটিক জুতো শুকোলেও, চামড়ার জুতো একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে।”
এদিকে মহাত্মা গান্ধী রোড ও সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের দোকান ও গুদামগুলিতেও জল ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দোকানদারেরা ভেজা কার্টন রাস্তায় ফেলে শুকোনোর চেষ্টা করছেন। এক চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবসায়ী জানান, “আজ দোকান খুলে দেখি জলের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে কার্টন। ব্যাপক ক্ষতি হল।”
পুজোর আগের সপ্তাহে টানা বৃষ্টি শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধাক্কা দিল। ভেজা জামাকাপড়, বই, জুতো, চিকিৎসা সামগ্রী, সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা এখন ভরসা রাখছেন সামনের কয়েকদিনে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার ওপর। তা না হলে আরও সমস্যায় পড়বেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা।