‘ভারত মহাকাশে থাকতেই এসেছে।’ স্পেস স্টেশন থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হিন্দিতে একথা বলেছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। মুম্বইতে বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভ ২০২৫-এ যোগ দিয়ে মহাকাশ অভিযান ঘিরে স্মৃতির ঝাঁপি খুলেছিলেন তিনি। দর্শক- শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরলেন তাঁর মহাকাশ সফরের অনবদ্য খুঁটিনাটি কাহিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ জুন, ২০২৫ সালে স্পেসএক্স ড্রাগন মহাকাশযানে চড়ে তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। Axiom 4 মিশনের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) এর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল স্পেস এক্স ড্রাগন। শুভাংশু ছাড়াও ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরির আরও তিনজন নভোচারী।
প্রায় ১৮ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকার পর গত ১৫ জুলাই, ২০২৫ তারিখে শুভাংশুরা পৃথিবীতে ফিরে আসেন। শুভাংশু শুক্লা হলেন প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী যিনি বেসরকারি উদ্যোগে মহাকাশ অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন। ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা ১৯৮৪ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্যালুট-7 মহাকাশ স্টেশনে ৮ দিন কাটিয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা ও থাকার কথা স্মরণ করে রীতিমতো আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন শুভাংশু। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে বসেই কথা বলেছিলেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতাও ইন্ডিয়া টুডের কনক্লেভে স্মরণ করেন। জানান, যখন তিনি স্পেস স্টেশনে বসে কথা বলেছিলেন, সেই সময়ে তাঁর সঙ্গে ছিল দেশের তেরঙা জাতীয় পতাকাও। ।
ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভ মুম্বই ২০২৫-এ শুভাংশু শুক্লা বলেন, ‘এই প্রথম আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছল ভারতের জাতীয় পতাকা। মহাকাশ থেকে এই প্রথম কেউ হিন্দিতে কথা বলল। এই স্মৃতি আজীবন থাকবে। ভারত কিন্তু মহাকাশে থাকবে বলেই পণ করেছে।’
বায়ুসেনার তরুণ পাইলট হিসেবে নিজের যাত্রা শুরু করেছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। ভারতীয় বায়ুসেনার মিগ-২১, মিগ-২৯, জাগুয়ার এবং সুখোই-৩০ চালিয়েছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন এই কাজটা আমি করছিলাম, বুঝতে পারিনি কী ধরনের সাফল্য অর্জন করেছি। মনে হয়েছিল বড় কিছু করছি। তবে নিজেকে ধন্য মনে করি, কারণ বায়ুসেনায় যোগদান করতে পেরেছি।’
তিনি আরও বলেন, ”অনেক দারুণ দারুণ এয়ারক্র্যাফ্ট উড়িয়েছি। ড্রাগন স্পেসক্র্যাফ্টে চেপে মহাকাশে যাওয়ার সুযোগটা যখন এল, তখন সর্বদাই মাথায় রাখতাম কীভাবে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে পারব। কোনও সুযোগ এলে তাতে হ্যাঁ বলতে পারাটাই আমার কাছে অনেক বড় বিষয়। এই একটা হ্যাঁ অনেক কিছু বদলে দিতে পারে।’
ইন্ডিয়া টুডের কনক্লেভে পরাজয় বা ব্যর্থতা সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করেছেন শুভাংশু শুক্লা। বলেন, ‘পরাজয়ের ভয় পাবেন না। আমার জীবনেও অনেক সেটব্যাক আছে। তাই ব্যর্থতাও সেলিব্রেট করা উচিত, কারণ ব্যর্থতা জীবনের একটা জার্নি। এটি আগামী প্রজন্মের কাছেও একটি বার্তা। ব্যর্থতা মানেই জীবনের শেষ, তা কিন্তু নয়। এটা একটা অনেক সুযোগের মধ্যে মাত্র একটা। একটা শিক্ষা এবং এগিয়ে যাওয়ারও একটি সুযোগ।’