নাটকীয় সুপার ওভারে শ্রীলঙ্কাকে হারাল ভারত। এর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কখনও কোনও সুপার ওভারে যাওয়া ম্যাচ হারেনি মেন ইন ব্লু। শুক্রবারও অব্যাহত রইল সেই ধারা। তবু এর পরেও কি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার আগে চাপমুক্ত থাকতে পারবেন গুরু গম্ভীর?
সুপার ফোরে ৩ ম্যাচের ৩ টিতেই হেরে শ্রীলঙ্কা তো ডুবেই গিয়েছে। কিন্তু সঙ্গে কি টিম ইন্ডিয়াকে নিয়েও ডুবল? সূর্য কুমার যাদবের দল টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এশিয়া কাপ জেতার সবথেকে বড় দাবিদারও মনে করা হচ্ছে তাদের। সেই মেন ইন ব্লু এ দিন ৫ উইকেট খুইয়ে ২০২ রান তোলার পরেও ম্যাচ টাই করে ফেলল আরেক মেন ইন ব্লু।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি কেরিয়ারের প্রথম শতরান করলেন পথুম নিশাঙ্কা। ৫৮ বলে তাঁর ১০৭ রানের ইনিংসটি ৭ টি চার এবং ৬ টি ছক্কা দিয়ে সাজানো। এ ছাড়া ৩২ বলে ৫৮ করে যান তিন নম্বরে নামা কুশল পেরেরা। পর্বতসম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে এই দুজনে ১২ ওভারের মধ্যেই গড়েন ১২৭ রানের জুটি। দুজনে যখন ব্যাট করছিলেন, মনে হচ্ছিল যেন অন্ততঃ ১ ওভার বাকি থাকতেই বিশ্বকাপজয়ীদের হারিয়ে দেবে শ্রীলঙ্কা।
এশিয়া কাপ শুরুর আগে সুনীল গাভাসকর বলেছিলেন, একমাত্র শ্রীলঙ্কাই পারে এই প্রতিযোগিতায় ভারতকে টক্কর দিতে। চারিথ আশালঙ্কার দল এ দিন যেন লিটল মাস্টারের সেই ভবিষ্যদ্বাণীকেই সত্যি করার ব্রত নিয়েছিল টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার পর। তবে শেষ বেলায় বরুণ চক্রবর্তী, কুলদীপ যাদব আর অর্শদীপ সিংয়ের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত আটকেই গেল দ্বীপরাষ্ট্র।
বরুণ-কুলদীপ, দুজনেই ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে ১ টি করে উইকেট নিয়েছেন। হর্ষিত রানা ৪ ওভারে ৫৪ রান দিলেও শেষ ওভারের প্রথম বলেই তুলে নেন শতরানকারী নিশাঙ্কাকে। অন্যদিকে ৪৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন অর্শদীপ। যদিও তাঁর আসল পারফরম্যান্সটা অপেক্ষা করছিল সুপার ওভারে। ৫ বলে মাত্র ২ রানেই শ্রীলঙ্কাকে সুপার ওভারে আটকে দেন টি-টোয়েন্টির এক নম্বর বোলার।
যদিও এই সুপার ওভার কম নাটকীয় ছিল না। অর্শদীপের প্রথম বলেই রিঙ্কু সিংকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কুশল পেরেরা। এর পর চতুর্থ বলে রান আউট হয়ে যান দাসুন শনাকা। কিন্তু যেহেতু বোলার কট বিহাইন্ডের আপিল করেছিলেন তাই উইকেটরক্ষক সঞ্জু স্যামসন কর্তৃক রান আউট হয়েও রান আউট হয়েও বেঁচে যান ব্যাটার। অর্শদীপের আবেদনে সাড়া দিয়ে শনাকাকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু ব্যাটার রিভিউ নিলে দেখা যায় বল ব্যাটে লাগেনি। এ দিকে আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, এক বার আম্পায়ার আউট ঘোষণা করে দিলে বল তৎক্ষণাৎ ডেড হয়ে যায়। ফলে রান আউট হয়ে গেলেও বেঁচে যান শনাকা।
এই ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া। অধিনায়ক সূর্য কুমার যাদব এ নিয়ে রীতিমতো তর্ক জুড়ে দেন অন ফিল্ড আম্পায়ারের সঙ্গে। যদিও তাতে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে বদল ঘটেনি। অবশ্য ঠিক পরের বলেই ফের শনাকাকে আউট করে সুপার ওভারে লঙ্কান ইনিংসের ইতি ঘটিয়ে দেন অর্শদীপ। জবাবে ৩ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম বলেই খেলা শেষ করে দেন ভারত অধিনায়কও।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে এ দিনও ৩১ বলে ৬১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছিলেন অভিষেক শর্মা। ৬ ইনিংসে ইতিমধ্যেই তাঁর সংগ্রহ ৩০৯ রান। তবে তার থেকেও এ দিনের বড় প্রাপ্তি হল চতুর্থ উইকেটে সঞ্জু স্যামসন এবং তিলক ভার্মার জুটি। মাত্র ৪১ বলে দুজনে যোগ করেন ৬৬ রান। স্যামসন করেন ২৩ বলে ৩৯ রান। যদিও দলের স্বার্থে অল্পের জন্য হাফ সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন তিলক। ৪৯ রানে অপরাজিত থেকে গিয়েছেন তিনি। তবে ফাইনালের আগে ভারতীয় মিডল অর্ডারের এই অবদান অধিনায়ক সূর্য এবং কোচ গম্ভীরকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে, তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?
