পুজোর কলকাতাতেও তৃণমূল কংগ্রেস আর বিজেপির রাজনৈতিক চাপানউতোর অব্যাহত। দেবীপক্ষের চতুর্থীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কালীঘাট মন্দিরে পুজো ঘিরেই যাবতীয় শোরগোল। বৃহস্পতিবার রাতে শহরে আসা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার কলকাতায় দুটি দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করেছেন। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে সজল ঘোষের দুর্গাপুজোর উদ্বোধন পর্ব নির্বিঘ্নে মিটেছে। তবে তারপরই কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার সময়ই বিতর্কের সূত্রপাত।
অভিযোগ, কালীঘাটে যাওয়ার পথে অমিত শাহের সমস্ত কাটআউট রাতের অন্ধকারে সরিয়ে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। রাজ্য বিজেপির নেতাদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের কথা মাথায় রেখেই, তাঁকে স্বাগত জানিয়ে বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত দলের কার্যকর্তারা ব্যানার এবং পোস্টার সহ কাটআউটও লাগিয়েছিলেন। কিন্তু ভোরবেলা এসে তাঁরা একটাও ব্যানার-পোস্টার দেখতে পাননি। পদ্ম নেতাদের অভিযোগ, সব উধাও করে সেই জায়গায় শাসক দল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ব্যানার টাঙিয়েছে।
বিজেপি নেতা তথা রাজ্য বিজেপির মিডিয়া ইনচার্জ তুষার কান্তি ঘোষ বলেছেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস নোংরা রাজনীতি করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মন্দিরে পুজো দিতে আসছেন, কিন্তু এরা সেখানেও রাজনীতি করছে। আর পুলিশ তো তৃণমূলের ক্যাডারে পরিণত হয়েছে। যারা দোষী তাদের কোনও শাস্তিই হবে না।’
শুধু পোস্টার-ব্যানার কিংবা ফ্লেক্স সরানোই নয়, চাপানউতোর আরও বেড়েছে দুপক্ষের স্লোগান যুদ্ধ ঘিরে। কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিয়ে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে উঠেছে জয় বাংলা স্লোগান। শাহকে দেখতে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকা জনতার মাঝেই কেউ কেউ স্লোগান তুলেছেন জয় বাংলা বলে। বিজেপি কর্মীরা পাল্টা জয় শ্রীরাম, ভারত মাতার জয় স্লোগান দিয়েছে।
স্লোগান যুদ্ধ ঘিরে সাময়িক উত্তেজনা দ্রুত প্রশমিত করেছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ পদ্মশিবিরের নেতা-কর্মীরা কালীঘাট থানায় অভিযোগ জানিয়েছেব ফ্লেক্স-পোস্টার-ব্যানার ‘খোয়া’ যাওয়া ঘিরে। পদ্মশিবিরের অভিযোগ অবশ্য মানতে চায়নি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।
কলকাতা পুরসভার ৮৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূল নেতা প্রবীর মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “অমিত শাহ আমাদের দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁকে স্বাগত জানানো আমাদের নৈতিক কর্তব্য। বিজেপি যে অভিযোগগুলি করেছে, সেগুলি তাদের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে তৈরি। তবে আমি খুশি যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কালীঘাটে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে উন্নয়ন নিজের চোখে দেখেছেন বলে।”
দেবীপক্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাংস্কৃতিক সফর ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক-বিবাদ কিন্তু মোটেই কাম্য ছিল না মহানগরীতে। দুর্যোগের মেঘ কাটিয়ে পুজোর কটা দিন নির্ভেজাল আনন্দেই থাকতে চান সর্বজনীনের উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে প্যান্ডেল হপাররা। নিম্নচাপের জেরে আচমকা নামা বৃষ্টির মতোই, রাজনৈতিক বিবাদও দ্রুত থেমে যাক, এমনই প্রার্থনা তাঁদের মা দুর্গার কাছে।