আমিনূল ইসলাম
পরিবর্তিত বাংলাদেশে দুর্গাপুজোর আগে দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। পুজোর আগে থেকেই শুরু হয়েছে মূর্তি ভাঙা। জামায়াতের উত্থানে অসাম্প্রদায়িক চেতনাই হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলাদেশ থেকে। তাই এবার দুর্গাপুজো উপলক্ষে মেলার আয়োজনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে, পুজো উপলক্ষে দু-একটি দোকান বসতে পারে। তবে মেলার আয়োজন চলবে না।
বাংলাদেশে এবছর প্রায় ৩৩ হাজার পূজামণ্ডপে দুর্গা পুজো হবে। শুরু হয়েছে তার প্রস্তুতি। এমনিতেই সাধারণ মানুষ ভালো নেই। জিনিষের দাম আকাশছোঁয়া। আইনশৃঙ্খলার দিন দিন অবনতি হচ্ছে। চাঁদাবাজির ঠেলায় ব্যবসাবাণিজ্যও লাটে ওঠার জোগার! কলকারখানায় অনিশ্চয়তা বাড়ছে। বাড়ছে বেকারত্ব। তাই চুরি-ছিনতাই এখন নিত্যদজিনের ঘটনা। পুলিশ কর্মীরাও আজ নিরাপদ নয় বাংলাদেশে। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
ইতিমধ্যেই ঢাকা ও জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভোটে জয়লাভ করেছে জামায়াতের সমর্থকরা। মৌলবাদীদের এই উত্থান এবং সরকারের পাকিস্তানপন্থী অবস্থান হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। অনির্বাচিত সরকারের আমলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে দিন দিন। নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামি লিগ ও বিএনপিকে জাতীয় রাজনীতিতে অবাঞ্ছিত করে তোলার ষড়যন্ত্রের জাল দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আসছে দুর্গাপুজো।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অবশ্য প্রতিশ্রুতির ঘাটতি নেই। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পালনে সরকারের সদিচ্ছার অভাব প্রকট হচ্ছে ক্রমশ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরি সাংবিদকদের বলেছেন, ‘আমি আশা করব, এবার পূজাটা খুব উৎসবমুখর পরিবেশে এবং নির্বিঘ্নে উদ্যাপিত হবে।’ তিনি জানান, গত বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকার ৪ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিল সরকার। এবার এক কোটি টাকা বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকা করা হয়েছে অনুদান। গত ১৫ বছর আওয়ামি লিগের সময় সরকারের অনুদান ছিল ২ কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার সেখান থেকে বাড়িয়ে এখন অনুদান পাঁচ কোটি টাকা করেছে। দুর্গাপুজোর সময় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা তিনি বলেন। জানান, আনসার (ভারতের হোমগার্ডের মতো বাহিনী) সদস্যই থাকবেন তিন লক্ষ। এছাড়া পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দায়িত্ব পালন করবে। তিনি অভয় দিয়েছেন সংখ্যালঘুদের। কিন্তু তবু আতঙ্কে দিন কাটছে হিন্দুদের।
তাঁদের আতঙ্ক যে যথার্থ সেটা বোঝা যায় গাইবান্ধা সাদুল্লাপুরে হামিন্দপুর কামারপাড়ায় দুর্গা প্রতিমার পাশাপাশি গণেশ, লক্ষ্মী, কার্তিকের মূর্তি ভাঙচুড় করে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনায়। সর্বত্রই ভয়ের পরিবেশ। পুলিশই আক্রান্ত হচ্ছে যেখানে, সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থা সহজেই বোঝা যায়। বহু জায়গা থেকে আসছে জোর করে ধর্মান্তকরণের খবর। নাবালিকাদের বলপূর্বক বৃদ্ধদের বিয়ে করার ঘটনাও নতুন কিছু নয়। মৌলবাদীরা প্রকাশ্যেই হুমকি দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই বহু দাগী জঙ্গি জেল থেকে মুক্ত। তারাও দাপটের সঙ্গে চাঁদাবাজি চালাচ্ছে। খুন ও ধর্ষণ এখন বাংলাদেশে জলভাত। হিন্দুদের মন্দির ও জমিজায়গা দজখলের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। তাই দুর্গা পুজোর আগে থেকেই সর্বত্র বাজছে বিসর্জনের সুর।
অথচ, বাংলাদেশে দুর্গাপুজো বহুকাল ধরে হয়ে আসছে। হিন্দু ও মুসলিম উভয়ে মিলে উতসবে মেতে ওঠেন এই উতসবে। অনেকেই মনে করেন, বঙ্গদেশে অকালে এই দুর্গাপুজো শুরু হয় রাজশাহির কাছে তাহেরপুরে। তাহেরপুর দুর্গাবাড়ির দুর্গাপুজো খুবই বিখ্যাত। তেমনি ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের দুর্গাপুজোও হিন্দু ও মুসলিম উভয়ের কাছেই বেশ আকর্ষণীয়। কিন্তু মৌলবাদী শক্তির উত্থানে সেখানেও এবার চাপা উত্তেজনা রয়েছে। জানা গিয়েছে, ঢাকা মহানগরীতেউ ২৫৫টি দুর্গা পুজো হয়। এবারও হচ্ছে। কিন্তু সর্বত্রই ভয় কাজ করছে। ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আতঙ্ক পিছু হঠছে না। কারণ অস্থির সময়ে চিরকালই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরাই টার্গেট হয়েছেন। এবারও সেটাই হচ্ছে। আর সেটা বুঝতে পেরেই বাংলাদেশ সরকারের ফতোয়া দশমীর দিন সন্ধ্যা ৭টার আগেই শেষ করতে হবে প্রতিমা নিরঞ্জন।