জুবিন গর্গের মৃত্যুর তদন্তে সিট গ্রেফতার করেছে সংগীতশিল্পী শেখর জ্যোতি গোস্বামীকে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে উত্তর-পূর্ব ভারত উৎসবে যোগ দিতে গিয়ে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে মারা যান ৫২ বছর বয়সী সংগীতশিল্পী জুবিন গর্গ। জানা গেছে, সেই সময় তিনি একটি ইয়ট ভ্রমণে ছিলেন, যেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁর দীর্ঘদিনের ব্যান্ড সঙ্গী ও ড্রামার শেখর জ্যোতি গোস্বামী। কিন্তু কে এই শেখর? জুবিনের সঙ্গে ঠিক কী সম্পর্ক ছিল তাঁর?
শেখরজ্যোতি গোস্বামী শুধু ড্রামারই নন, তিনি একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার, মিউজিক প্রোডিউসার এবং কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর ইনস্টাগ্রাম বায়ো বলছে সেই কথা। বহু বছর ধরে তিনি জুবিনের ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত। তবে শুধু ব্যান্ডমেট নন, জুবিনের দীর্ঘদিনের সহযোগী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন শেখর। সঙ্গীত জগতে বহু বছর ধরে তিনি জুবিনের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করেছেন।
জুবিনের মৃত্যুকালে তাঁর সঙ্গে ছিলেন শেখরজ্যোতি গোস্বামী। তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সাঁতার কাটতে গিয়ে জুবিন কিছু সময় জলে উল্টো হয়ে ভেসে ছিলেন। তিনি কাছে গিয়ে দেখেন, জুবিনের মুখ ও নাক থেকে সাদা তরল বেরোচ্ছে। তাঁর মাথা তুলতেই দেখা যায়, ডানদিকে ঘোরালে মাথা ডানদিকে ঝুলে যাচ্ছে, বাঁদিকে ঘোরালে বাঁদিকে ঝুলছে। এর পরেই তিনি সাহায্যের জন্য ডাকেন।
অসম সরকার ইতিমধ্যেই সিআইডির বিশেষ ডিরেক্টর জেনারেল মুন্না প্রসাদ গুপ্তার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের সিট গঠন করেছে। তাঁরা শুধু শেখর গোস্বামীকেই নয়, উৎসবের আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত, জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং সিঙ্গাপুরে উপস্থিত অসম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানা গিয়েছে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, সিটের তদন্তে যদি সন্তুষ্টি না মেলে তবে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করা হবে। সিঙ্গাপুরে করা প্রথম ময়নাতদন্তে স্পষ্ট বলা হয়েছে, জুবিনের মৃত্যু হয়েছে ডুবে যাওয়ার কারণে। দ্বিতীয় অটোপসি হয়েছে অসমের গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ২৩ সেপ্টেম্বর। সেই রিপোর্ট এখনও আসেনি।
এই তদন্তের অংশ হিসেবেই বৃহস্পতিবার শেখরজ্যোতি গোস্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার প্রয়াত সংগীতশিল্পী জুবিন গর্গের পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সোনাপুরে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। তাঁকে ২১ বার গান স্যালুট দেওয়া হয়। প্রিয় সংগীত শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, সাংসদ সর্বানন্দ সোনোয়াল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু সহ অসংখ্য মন্ত্রী ও শিল্পী। তবে জুবিনের মৃত্যু নিয়ে রহস্য ঘনাচ্ছে। ঠিক কী ঘটেছিল, জানতে একাধিক ব্যক্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিট। শেষ দেখতে চান অসমের মুখ্যমন্ত্রী। অসমের অন্যতম আইকনের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, CAA-বিরোধী অন্যতম মুখ ছিলেন জুবিন গর্গ। সে সময় অসম সরকার তাঁর কাজকর্মকে ভালভাবে নেয়নি। কিন্তু জুবিন দাঁড়িয়েছিলেন অসমের মানুষের পাশে, তাঁদের স্বার্থে।