ত্রিপুরার প্রথম বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী সহ প্রভারী হিসেবে নিযুক্ত করল কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। রাজনৈতিক মহলের মতে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গে বড় রাজনৈতিক ভূমিকায় আনার সিদ্ধান্তের পিছনে বিজেপির বিশেষ কারণ রয়েছে। প্রথম জীবনে দিল্লির কর্মী থেকে শুরু করে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী, আর এখন লোকসভা সাংসদ—বিপ্লব কুমার দেবের যাত্রাপথই তা প্রমাণ করে।
২০১৫ সালে ত্রিপুরার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন বিপ্লব দেব। সেই সময়ে ওই রাজ্যে কার্যত অস্তিত্বহীন ছিল বিজেপি, মণ্ডল সভাপতি পর্যন্ত ছিলেন না। বিপ্লবের ‘মিসড কল’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দলে ১.৫ লাখেরও বেশি মানুষ যোগ দেন। নতুন সদস্যদের নিজে ফোন করে বিজেপিতে যোগ দিতে উৎসাহ প্রদান করতেন । এমনকী অনেক সময় সিপিএম নেতাদের বাড়িতেও গিয়েছিলেন তিনি, যাদের পরিবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছিল।
অবিরাম পরিশ্রমের পুরস্কার আসে ২০১৬ সালে, যখন অমিত শাহ তাঁকে ত্রিপুরা বিজেপির সভাপতি করেন। মাত্র দুই বছরের মধ্যে ছবিটা পাল্টে দেন বিপ্লব। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ত্রিপুরা বিধানসভার ৬০ আসনের মধ্যে ৩৬টিতে জয়ী হয়ে বিজেপি শেষ করে দেয় ২৫ বছরের বাম শাসন। প্রথমবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হন বিপ্লব দেব।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে ত্রিপুরা(পশ্চিম) আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি। ৮,৮১,৩৪১ ভোট পেয়ে কংগ্রেস প্রার্থী আশিস কুমার সাহাকে হারান ৬,১১,৫৭৮ ভোটে, যা ছিল ওই আসনের ইতিহাসে অন্যতম বড় ব্যবধান। এরপরই তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয় হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের সহ-প্রভারি হিসেবে।
তখন হরিয়ানায় প্রবল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা আর লোকসভায় দুর্বল ফলাফলের কারণে বিজেপির ক্ষমতা ধরে রাখা ঝুঁকির মুখে ছিল। ধর্মেন্দ্র প্রধানের নেতৃত্বে বিপ্লব দেবের কৌশল বিজেপিকে তৃতীয়বারের মতো ঐতিহাসিক জয় এনে দেয়। আবারও প্রমাণিত হয় তাঁর সংগঠন গড়ে তোলার দক্ষতা।
এবার পশ্চিমবঙ্গে তাই বিপ্লবকেই বাজি ধরেছে বিজেপি। দলের অন্দরে অনেকে বলছেন, ত্রিপুরা ও বাংলার রাজনীতিতে মিল রয়েছে—দীর্ঘদিনের বাম প্রভাব। এক বিজেপি নেতা বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বামেদের হটিয়ে ক্ষমতায় এলেও এখন তাঁর তৃণমূল কংগ্রেস সেই পুরনো শাসনের প্রতিচ্ছবি। এমন প্রভাবশালী মতাদর্শকে হারাতে বিপ্লব দেবের মতো নেতা দরকার, যিনি নিজে দীর্ঘদিনের বাম শাসন ভাঙার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।”
রাজনীতিতে প্রতীকও কৌশলের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। বিপ্লব দেবকে সামনে এনে বিজেপি বোঝাতে চাইছে—সংগঠন, ধৈর্য আর নেতৃত্বের জোরে তারা বঙ্গভূমিতেও লড়াই করতে প্রস্তুত।
তবে এই পদক্ষেপ কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু বিজেপির দৃষ্টিতে বিপ্লব দেবের দায়িত্ব দেওয়া নিছকই কৌশল নয়, বরং প্রতীকী বার্তাও বটে।