কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং বিশ্বজুড়ে নানা শিল্পকে নতুনভাবে গড়ে তুলছে। নির্ভরযোগ্য, পরিষ্কার ও টেকসই বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বেড়ে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে ছোট মড্যুলার রিঅ্যাক্টর এখন বিশ্বজুড়ে জ্বালানি খাতের বড় আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
এসএমআর হল কারখানায় তৈরি করা ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা সাধারণত ৩০০ মেগাওয়াটের কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। দ্বীপ, প্রত্যন্ত অঞ্চল বা ডেটা সেন্টারের মতো জায়গায় এগুলো বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ভারতও এখন নিজস্ব “ভারত স্মল মড্যুলার রিঅ্যাক্টর” তৈরি করছে। বর্তমানে এই প্রযুক্তিতে নেতৃত্বে চিন। রাশিয়াও দ্রুত এগোচ্ছে।
ড. আলেকজান্ডার ভলগিন, রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম-এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক, এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন,”এসএমআর মানে ছোট এবং মড্যুলার। ছোট মানে কম জায়গা লাগে, আর মডুলার মানে পুরো ইউনিটটি একসাথে কারখানায় তৈরি হয়ে পরিবহণ করা যায়।”
কুদানকুলাম পারমাণবিক প্রকল্পের মতো বড় কেন্দ্রের বদলে রাশিয়ার এসএমআর মাত্র ১৫–১৭ হেক্টর জমিতেই স্থাপন করা যায়। এতে পাম্প, স্টিম জেনারেটর ও জ্বালানি সব এক ইউনিটের মধ্যে থাকে। প্রতিটি রিঅ্যাক্টর ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ও ২০০ মেগাওয়াট তাপশক্তি উৎপাদন করতে পারে। এর ইউরেনিয়াম জ্বালানি ২০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করা হয়, যা প্রচলিত রিঅ্যাক্টরের চেয়ে বেশি হলেও নিরাপদ সীমার মধ্যে। এই ছোট রিঅ্যাক্টর ট্রেনে পরিবহন করা যায়, ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চল, দ্বীপ বা যেখানে ডিজেল ব্যবহার হয় সেখানে এটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।
রাশিয়া ইতিমধ্যেই ইয়াকুতিয়া অঞ্চলে একটি স্থলভিত্তিক এসএমআর তৈরি করছে এবং উজবেকিস্তানে ৬টি ইউনিট সরবরাহের চুক্তি করেছে। চিন এরই মধ্যে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি স্থলভিত্তিক এসএমআর চালু করেছে। রাশিয়া বলছে, তারা ১৯৫০-এর দশক থেকেই আইসব্রেকার জাহাজে ছোট রিঅ্যাক্টর ব্যবহার করছে। বর্তমান RITM-200 রিঅ্যাক্টর সেই অভিজ্ঞতার আধুনিক রূপ।
ভারতও পিছিয়ে নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছেন, ২০৭০ সালের মধ্যে নেট-জিরো লক্ষ্য অর্জনের পথে ভারত ১০০ গিগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। মুম্বইয়ের ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার (BARC) ভারতীয় এসএমআর তৈরি করছে। রাশিয়া ভারতকে সহযোগিতার প্রস্তাবও দিয়েছে।
ভারতের ভেতরেই সরবরাহ চেইন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে রাশিয়া এবং এনিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনাও করছে। এদিকে ভারত বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য পারমাণবিক খাত খুলে দিয়েছে। তার উদাহরণ NPCIL ও NTPC-এর যৌথ উদ্যোগ। এদিকে রাশিয়াও নজরে রেখেছে।
রাশিয়ার দাবি, এসএমআর একদিকে নিরাপদ, অন্যদিকে টেকসই। আইসব্রেকারে ব্যবহৃত রিঅ্যাক্টরগুলো থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। এই রিঅ্যাক্টরে প্যাসিভ ও অ্যাকটিভ সেফটি সিস্টেম রয়েছে, যা দুর্ঘটনা-সহনশীল এবং নিরাপদ ডিজাইনে তৈরি। এছাড়া এগুলো পরিবেশবান্ধব একবার জ্বালানি ভরে দিলে ৫–৬ বছর ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম।
যদিও বড় প্ল্যান্টের তুলনায় এসএমআরের বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেশি হতে পারে, তবে এর কম মূলধনী খরচ, দ্রুত স্থাপন এবং নমনীয়তার কারণে এগুলো এআই ডাটা সেন্টার, শিল্পাঞ্চল ও দ্বীপের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। ড. ভলগিনের বলেন,
“ভারত বিশাল দেশ। এখানে সব ধরনের রিঅ্যাক্টরের প্রয়োজন হবে।ভারতীয় এসএমআর, বড় প্রকল্প, এমনকী ভাসমান রিঅ্যাক্টরও।” ভারতের ১০০ গিগাওয়াট পারমাণবিক লক্ষ্যে পৌঁছতে দেশের বেসরকারি সংস্থার তৈরি ছোট রিঅ্যাক্টর ভবিষ্যতে হতে পারে বড় হাতিয়ার।