বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না মধ্য কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দুর্গাপুজো ঘিরে। বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের এই দুর্গাপুজোয় এবছরের থিম, ‘অপারেশন সিন্দুর’। পুজো উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, অপারেশন সিন্দুর এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্য তুলে ধরার জন্যেই বারে বারে পুলিশের বাধার মধ্যে তাঁদের পড়তে হচ্ছে। পুজোর আবহেই পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার ক্ষোভও উগরে দিয়েছেন পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা সজল ঘোষ।
শুক্রবারই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দুর্গাপুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। উদ্বোধনী ভাষণে, সোনার বাংলা গড়ার ডাক দিয়ে, পুজোর আবহেই রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়েছেন। সেই রেশ কাটতে না কাটতে শনিবার, পূজামণ্ডপের লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের দায়িত্বে থাকা সংস্থাকে নোটিস দিল মুচিপাড়া থানার পুলিশ। সংস্থার লাইসেন্স, পুজো-উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তাদের চুক্তিপত্র সহ বেশ কিছু তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে। আর এই নিয়েই নতুন করে বেঁধেছে বিতর্ক।
বস্তুতপক্ষে পুজো শুরুর আগে থেকেই চাপান-উতোর শুরু হয়েছিল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার ঘিরে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগে বারে বারে করেছেন পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা সজল গোষ। সোস্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ দিয়েছেন যখন-তখন। শনিবার লিখেছেন,“গতকাল আমার এক বিজ্ঞাপন দাতাকে পুলিশ তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছে। আজকে যাঁরা বাইরে থেকে এসে লাইট-সাউন্ডের কাজ করছে, তাঁদের চিঠি পাঠিয়ে লাইসেন্স চেয়েছে। কিন্তু পুলিশই আমাদের অনুমতি দিয়েছে। এভাবে পুজো আমাদের পক্ষে চালানো সম্ভব কিনা আমরা সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। যদি এই পরিস্থিতি হয় তাহলে আমরা মণ্ডপ নিষ্প্রদীপ করব।”
বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও দাবি করেছেন যে পুরো শিয়ালদহ স্টেশন এলাকা ব্যারিকেডে মোড়া হয়েছে। যার দরুণ গাড়ি এবং দর্শনার্থীদের মণ্ডপে পৌঁছতে বেশ অসুবিধে হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ ভিড় আটকাতেই এমন ঘেরাটোপ। লিখেছেন, “যারা ব্যারিকেড ভেদ করতে পারবে, তারাই প্রবেশ করতে পারবে।”
পুলিশি পদক্ষেপ ঘিরে শনিবার রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করেছেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা সজল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘রেলিং দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে মাঠ। পুলিশি অসভ্যতামি চলছে। আমরা সব সঠিক কাগজপত্র দিয়েছি বলেই পুলিশি অনুমোদন দিয়েছিল। পুলিশ বলেছে চালাতে দেব না নয়, চালানো যাবে না। পুলিশের সঙ্গে লড়াই করে পুজো করা সম্ভব নয়। পুলিশ বলছে, অডিও-ভিস্যুয়াল চালানো যাবে না।পুলিশ চাইছে দুর্ঘটনা ঘটুক। যাতে পুজো কমিটিকে ব্যান করে দেওয়া যায়। আমি সনাতনী হিন্দু হয়ে এটাই জিজ্ঞেস করছি, যে এ রাজ্যে কি পুজো করা যাবে না?’
প্রসঙ্গত রাজ্য সরকারের দুর্গাপুজোর অনুদান শুরু থেকেই প্রত্যাখ্যান করছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো কমিটি। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তাদের মণ্ডপ সজ্জায় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বিষয়গুলি দর্শনার্থীদের বাড়তি মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। ২০২৩ সালে, অযোধ্যার রাম মন্দিরের আদলে হয়েছিল পুজো মণ্ডপ। ২০২৩ সালের সেই দুর্গাপুজোর উদ্বোধনও করেছিলেন অমিত শাহ।
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো ঘিরে এমন বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের মুখপাত্র এবং পুর প্রতিনিধি অরূপ চক্রবর্তী, সজল ঘোষের অভিযোগকে কটাক্ষে বিঁধেছেন। বলেছেন “পুজো হিট করতে গেলে বিতর্ক তৈরি করো। প্রশাসনকে গালিগালাজ করলে বিতর্ক তৈরি হয়। সজল সেই সস্তার জনপ্রিয়তার লাইন নিয়েছে। এখন যাঁরা পুজোর লাইটিংয়ের কাজ করেন, তাঁদের যদি লাইসেন্স-সহ সব কাগজ ঠিক না থাকে সেখান থেকে যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তার দায়িত্ব কে নেবে! পুলিশ-প্রশাসন পুজো বন্ধ করতে বলেনি। পুলিশ লাইটিংয়ের এজেন্সির কাছে কাগজ চেয়েছে তাতে সজল ঘোষের গায়ে লাগছে কেন?”