শুভদীপ বসু
আমেরিকায় ক্যালিফোর্নিয়ার মিলপিটাসে বে এরিয়ার প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক সংস্থা বেঙ্গল ক্লাব অব বে এরিয়া (বিসিবিএ) এই বছরের দুর্গাপুজো উদযাপন করেছে ১৯-২০ সেপ্টেম্বর আরিয়া ইউনিভার্সিটি, মিলপিটাস-এ। বিসিবিএ মূলত একটি অলাভজনক সংগঠন, যা বাঙালি ও ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও উদযাপনের জন্য কাজ করে।
দু’দিনের এই উৎসবে বে এরিয়ার শতাধিক পরিবার একত্রিত হয়েছিলেন দেবী দুর্গার আরাধনায়। এবারের পুজোর থিম ছিল “নয়টি প্রেমের রূপ”, যা সমস্ত সজ্জা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং অনুষ্ঠানগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে। এই থিমকে কেন্দ্র করে আগত দর্শনার্থীরা একটি সমন্বিত সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
বিসিবিএ-র দুর্গাপুজোর মূল আকর্ষণ ছিল প্রথাগত পুজো অনুষ্ঠান, যা দু’দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়। পুজো চলাকালীন দর্শনার্থীদের মন ছিল ভক্তি ও আনন্দের এক অনন্য মিশ্রণে। এছাড়াও, অনুষ্ঠানটি আরও প্রাণবন্ত করার জন্য আয়োজন করা হয়েছিল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, যেমন: গান, নাচ, নাটক, এবং বাঙালি ঐতিহ্যবাহী খাবারের পরিবেশন।
অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে বিশেষ আকর্ষণ ছিল ফ্যাশন শো। প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত ফ্যাশন শো পরিচালনা করেন ইপ্সিতা চৌধুরীর সংস্থা ‘ইপসি স্টাইল’, যা ছিল অনুষ্ঠানটির অন্যতম হাইলাইট।
মিউজিক নাইটে স্থানীয় ব্যান্ড ‘বাকি দুআনা’-র লাইভ পারফরম্যান্স দর্শকদের মন জয় করে নেয়। সঙ্গে ছিল ড্যান্স মিউজিক্যাল পারফরম্যান্স “প্রেমাঞ্জলি”
দ্বিতীয় দিনে সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে দুর্গাপুজোর সমাপ্তি হয়। ভাসানের আগে ধুনুচি নাচে শামিল হয়েছিলেন স্থানীয় বাঙালিরা।
বিসিবিএ-র দুর্গাপুজা বে এরিয়ার উল্লেখযোগ্য পুজো উদযাপনগুলোর মধ্যে একটি, যেটি প্রবাসী, সংস্কৃতি, প্রথমা এবং পশ্চিমী পুজোর সঙ্গে সমান্তরালভাবে সুপরিচিতি ।
বিসিবিএ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালে। এর প্রতিষ্ঠাতারা হলেন ইপ্সিতা চৌধুরী, রুচিরা চন্দা, নীলাঞ্জনা মিশ্র, অরিজিৎ চন্দ, এবং পার্থ রায়চৌধুরী। ক্লাবের প্রথম বছরের পুজো অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইপ্সিতা চৌধুরীর গ্যারাজে। পরবর্তী বছরগুলিতে ধাপে ধাপে এটি একটি জনসংগঠন হিসেবে মিলপিটাস, ফ্রিমন্ট, সান্টা ক্লারা এবং আশেপাশের শহরের সদস্যদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পারস্পরিক জনসংযোগের সুযোগ প্রদান করছে।
এ বছরও বিসিবিএ দুর্গাপুজো ‘নয়টি প্রেমের রূপ’ থিমে সম্পূর্ণ সফল হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক, স্পনসর এবং পারফর্মারদের যৌথ প্রচেষ্টার কারণে এই উদযাপন একটি সমৃদ্ধ ও আনন্দময় সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে। বিসিবিএ সবসময় বাঙালিদের জন্য “ঘর থেকে দূরে ঘর” তৈরি করার পাশাপাশি বে এরিয়ার সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভাগাভাগি করার লক্ষ্য রাখে।
উৎসবের অংশ হিসেবে ২০ সেপ্টেম্বর ‘ডান্ডিয়া রস’ অনুষ্ঠিত হয়, যা পুরো সপ্তাহান্তের উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
বিসিবিএ-র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই পুজো কেবল বাঙালি সম্প্রদায়কে একত্রিত করেনি, বরং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও আনন্দের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ও তৈরি করেছে।