শরতের নীল আকাশে উঁকি দিয়েছে সাদা মেঘ। শিউলিঝরা সকালে, ঢাকের আওয়াজে কিছুটা হলেও কোণঠাসা কালো মেঘ। সর্বজনীনের মণ্ডপ থেকে শুরু করে বাড়ির পুজোয় রবিবার সকাল থেকে ব্যস্ততা। সর্বত্রই ষষ্ঠীর বোধন-অধিবাস আর কলাবউ স্থাপনের তোড়জোড়। আর এমনই আবহে শেষ মুহূর্তের বকেয়া কেনাকাটা সারছেন প্রতীক্ষায় থাকা ব্যস্ত জনতা। কেনাকাটার পাশাপাশি প্যান্ডেল হপিংও সেরে নিচ্ছেন জোরকদমে।
কয়েক বছর আগেও, নতুন নতুন পোশাক, উপহার আর ঘর সাজানোর সামগ্রী কেনার ধুম লাগত দুর্গাপুজোর আবহে। আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট কিংবা হাতিবাগানে যাওয়া ছিল মাস্ট। শারদোৎসবের মূল আকর্ষণ ছিল এই একসঙ্গে বেরিয়ে দরদাম করে কেনাকাটা। আর এখন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলির দাপটে সেই কেনাকাটার ভিড় অনেকটাই ফিকে।
তবুও শনিবার দেবীপক্ষের পঞ্চমীতে গড়িয়াহাট, হাতিবাগান কিংবা নিউ মার্কেটের পুজোর বাজার ছিল জমজমাট। মাত্রাছাড়া ভারী বৃষ্টি এবং জমে থাকা জলের কারণে মার খেয়েছে দ্বিতীয়া, তৃতীয়া এবং চতুর্থীর বাজার। অনলাইন শপিংয়ের দাপট সত্ত্বেও মহানগরীর খুচরো ব্যবসায়ীরা এবারও ভাল রকম পুজোর স্টক রেখেছিলেন। বৃষ্টির দাপটে বিক্রিবাটা সেভাবে না হওয়ায় দুঃশ্চিন্তা একটা ছিলই। তবে পঞ্চমীর ‘সেল’ তাঁদের সেই দুঃশ্চিন্তা অনেকটাই কমিয়েছে।
তবে এর বিপরীত ছবিও উঠে এসেছে শনিবারের কলকাতার বাজার থেকে। নাগাড়ে বৃষ্টি এবং জমা জলের কারণে মজুত স্টক ভাল রকম নষ্ট হয়েছে বলে খেদোক্তি করেছেন ফুটপাতের অধিকাংশ ব্যবসায়ী। লোকসান কমাতে অনেকটা ছাড়ে কিছু সামগ্রী বিক্রি করেছেন বাধ্য হয়ে। বলেছেন, ”পরিচিত ক্রেতারা এসে পছন্দের জিনিস পাচ্ছেন না, নতুন করে যে কিনব, সেই মূলধনও তো নেই।”
এমনিতে অনলাইন শপিং-এর দাপটে বড় দোকানদার থেকে ফুটপাথের হকার, সবাই রয়েছেন চাপের মুখে। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলির “বিগ ফেস্টিভ্যাল সেল” চাপ আরও বাড়িয়েছে। অসম প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বড় ভরসার জায়গা উৎসবকেন্দ্রিক বিক্রিকাটা। কারণ গোটা বছরের লাভের বড় অংশ উঠে আসে এখান থেকে। চলতি বছর সেই আয় এবার মার খেয়েছে প্রকৃতির রোষে।
পুজোর বাজার মানে তো শুধু জামা-কাপড় কিংবা উপহার সামগ্রী কেনা নয়, রয়েছে একসঙ্গে ঘোরার আনন্দ, খাওয়া-দাওয়া এবং সেখানকার কাছে-পিঠের মণ্ডপগুলিতে ঠাকুর দেখা পর্ব। আম-বাঙালির সেই সাবেক ঐতিহ্য, মল আর অনলাইন শপিং-এর দাপট সত্ত্বেও টিকে রয়েছে এখনও। তবে নতুন প্রজন্ম কতদিন সেটা বাঁচিয়ে রাখবে সেটা বলা বেশ মুশকিল।