
পাকিস্তানি সেনার সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংঘর্ষে রক্তের স্রোত বইছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। আন্দোলনকারী সাধারণ মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করতে নৃশংস অত্যাচার চালাচ্ছে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ৩ পুলিশ কর্মীও। আহতের সংখ্যা ৩০০ পার। অভিযোগ, অতিরিক্ত সেনা পাঠিয়ে, ইন্টারনেট বন্ধ করে সেখানে দমনপীড়ন চালাচ্ছে পাক প্রশাসন। গত সপ্তাহেই পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের একটি গ্রামে বোমা ফেলে ছিল পাক বায়ুসেনার চিনে তৈরি জে-১৭ যুদ্ধবিমান। চিনে তৈরি এলএস-৬ লেজ়ার গাইডেড বোমা ব্যবহার করে পাক বিমান বাহিনী। সেই হামলায় ৩০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন সেখানে। পাক সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভে ফুঁসছে অধিকৃত কাশ্মীর। অভিযোগ, গোটা অঞ্চলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিকাঠামো ও পানীয় জলের অভাব গুরুতর। বারবার দাবি জানানো হলেও, সরকারের তরফে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি। সেখানে সরকারি কাজে অবহেলা, দুর্নীতি, ঘুষ মাত্রাছাড়া আকার নিয়েছে। যার জেরে ৩৮ দফা দাবিকে সামনে রেখে গত কয়েকদিন ধরে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আন্দোলনে নেমেছেন সেখানকার সাধারণ জনগণ। যত দিন গড়াচ্ছে, ততই আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়ছে সেখানে। বৃহস্পতিবার দাদিয়ালে পাক সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে স্থানীয়দের। সূত্রের খবর, মুজফ্ফরাবাদ, রাওয়ালকোট, নীলম উপত্যকা, কোটলিতে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয় হিংসাত্মক আকার ধারণ করে।অভিযোগ, মুজফ্ফরাবাদে পাক সেনার গুলিতে মৃত্যু হয় ৫ আন্দোলনকারীর। ধীরকোটেও সেনার গুলিতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এখানে ৩ পুলিশ কর্মীর মৃত্যুর খবরও মিলছে। আহতের সংখ্যা প্রায় কমবেশি ২০০। যার মধ্যে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক, অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে জম্মু কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামি অ্যাকশন কমিটি। গত কয়েক দিন ধরেই সেখানকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত। যে ৩৮ দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন মানুষজন, তার মধ্যে অন্যতম হল পাকিস্তানে বসবাসকারী কাশ্মীরি শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত ১২টি বিধানসভা আসনের বিলুপ্তি ঘটানো। পাশাপাশি, করছাড়, ভর্তুকিযুক্ত আটা, নিখরচায় বিদ্যুতের দাবিও রয়েছে। রয়েছে উন্নয়নের একগুচ্ছ দাবিও।এই আন্দোলনের জেরে থমকে গিয়েছে গোটা পাক অধিকৃত কাশ্মীর। সেই ২৯ সেপ্টেম্বর আন্দোলন শুরু হওয়ার সময় থেকেই দোকানপাট, বাজারহাট সবই কার্যতত বন্ধ। মোবাইল ফোন, ল্যান্ডফোন কাজ করছে না সেখানে, কাজ করছে না ইন্টারনেটও। সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী পাথর ছুঁড়ে মারছেন এবং মুজাফফরাবাদে তাদের পদযাত্রা আটকাতে সেতুর উপর রাখা বড় বড় শিপিং কন্টেইনার ভেঙে ফেলছেন। অন্যান্য শহরে, নিরাপত্তার কড়াকড়ি সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা মিছিল করেছেন। স্লোগান তুলেছেন “শাসকরা, সাবধান। আমরা তোমাদের ধ্বংস করব” এবং “কাশ্মীর আমাদের, আমরাই এর ভাগ্য নির্ধারণ করব”।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর লন্ডনে ছুটি কাটাতে যাওয়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জানিয়েছেন, অধিকৃত কাশ্মীরের দাবিদাওয়া শুনতে প্রস্তুত তাঁর সরকার। শান্তিপূর্ণ ভাবে আলোচনা করে, সমঝোতার রাস্তা বের করতে হবে। নিরাপত্তা বাহিনীকে সংযম দেখানোর কথাও বলেন তিনি। কিন্তু তার পরও পাক সেনার গুলি চালানোর ঘটনা এবং হতা-হতের রক্তের স্রোত উঠে এসেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে ।জয়েন্ট আওয়ামি অ্যাকশন কমিটির দাবি, পাক সেনার আধিকারিক, ব্রিগেডিয়ার ফইক গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপলস ন্যাশনাল পার্টির মুখপাত্র নাসির আজিজ খান সরাসরি রাষ্ট্রসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের ৬০তম অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আজিজ খান, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মানবিক সংকট সম্পর্কে সতর্ক করে দেন এবং আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে সদস্য দেশগুলিকে তাদের বাধ্যবাধকতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।