
রাজ্যে না জানিয়ে ডিভিসি-র জল ছাড়া ঘিরে একাদশীর সকালেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। সোশাল মিডিয়ায় লেখা মুখ্যমন্ত্রীর সেই পোস্টের কয়েক ঘণ্টা পরেই জল ছড়ার পরিমাণ আরও বাড়াল ডিভিসি। বিতর্কের আবহেই এবার ছাড়া হচ্ছে ৭০ হাজার কিউসেক জল। মাইথন এবং পাঞ্চেত এই দুই জলাধার থেকে জল ছাড়ছে ডিভিসি। যার জেরে দক্ষিণবঙ্গের চার জেলায় বেশ কিছু অংশ নতুন করে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা।দুর্গাপুজোর মরসুমে কেন না-জানিয়ে ডিভিসি জল ছেড়েছে? প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৬৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার অভিযোগ তুলে নিজের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে তোপও দেগেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। শুধু তাই নয়, ডিভিসির এমন পদক্ষেপকে বেপরোয়া কাজ বলে অভিহিত করেছেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ”এই ধরনের একতরফা পদক্ষেপ লজ্জাজনক এবং একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অবহিত না করে জল ছেড়ে দিয়ে, ডিভিসি বাংলার লক্ষ লক্ষ জীবনকে তাৎক্ষণিক বিপদের মধ্যে ফেলেছে। এটি কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি ডিভিসি দ্বারা সৃষ্ট একটি দুর্যোগ।”মমতা আরও লিখেছেন, ”আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কাউকে বাংলার বিসর্জন করতে দেব না। আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিটি ষড়যন্ত্র, পূর্ণ শক্তি দিয়ে প্রতিহত করা হবে। সত্য, মিথ্যার উপর জয়লাভ করবে এবং শুভ ইচ্ছা, অশুভের উপর জয়লাভ করবে। জয় মা দুর্গা…” সেই বিতর্কের আবহেই এবার ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে। ডিভিসির এক কর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড সরকারকে জানিয়েই জল ছাড়া হয়। ডিভিসি নিজের ইচ্ছায় জল ছাড়ে না।

ডিভিসি তাদের জল ছাড়ার কথা জানানোর দাবি করলেও, রাজ্য প্রশাসন কিন্তু তা বারে বারেই অস্বীকার করেছে। তাছাড়া সম্প্রতি ডিভিসির জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটি (ডিভিআরআরসি) থেকে রাজ্যের দুই প্রতিনিধিও পদত্যাগ করেছেন। প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরে একের পর এক নিম্নচাপের ধাক্কায় গত কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে ঝাড়খণ্ডেও। এরাজ্যেও নিম্নচাপের জেরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি চলছে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায়। ভারী বৃষ্টি চলছে গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে। তবে ঝাড়খণ্ডে ভারী বৃষ্টির জেরে ডিভিসির জলাধারগুলি এখন রীতিমতো টইটম্বুর। ডিভিসি সূত্রে খবর, শুক্রবার বিকেল থেকে মাইথন জলাধার থেকে ৪২ হাজার ৫০০ কিউসেক এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ২৭ হাজার ৫০০ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে দামোদর তীরবর্তী অঞ্চলগুলির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছে তারা। দুর্গাপুরে রাজ্য সেচ দফতরের জলাধারেরও জলধারণ ক্ষমতা পেরিয়েছে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বর্ধমান, হাওড়া এবং হুগলি জেলায় দামোদর তীরবর্তী এলাকাগুলিতে সতর্কতা জারি হয়েছে।বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাসভবনে শুক্রবার গিয়েছিলেন আরামবাগের সাংসদ মিতালি বাগ সহ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কয়েক জন তৃণমূল নেতা-নেত্রী।
তৃণমূল সূত্রে খবর, দলনেত্রী মমতা তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে ডিভিসি-র ছাড়া জলের মোকাবিলায় নামতে নির্দেশ দিয়েছেন। আরামবাগের সাংসদকেও নিজের লোকসভা কেন্দ্রে ফিরে দ্রুত কাজ শুরু করতে বলেছেন তৃণমূল নেত্রী। ডিভিসি-র জলে যে সব এলাকা নতুন করে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা, সেই সব এলাকায় দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।মমতার পাশাপাশি কেন্দ্রকে বিঁধেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বিজেপিকে তোপ দেগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, প্রতি বছর ডিভিসিকে অস্ত্র করে বাংলায় সৃষ্টি করা হয় ম্যান-মেড বন্যা। দুর্গাপুজোর মতো আনন্দের মুহূর্তেও মানুষের জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয় এই বাংলা-বিরোধী বিজেপি। কারণ বাংলার মানুষ তাদের ভোটবাক্সে সঙ্গ দেয়নি।

