
বিজয়া দশমীর দিন মা দুর্গা সপরিবারে রওনা দেন কৈলাসের উদ্দেশে। বিসর্জনের আগে তাই আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয় নীলকণ্ঠ পাখি। ‘শিবের দূত’ নীলকন্ঠ পাখি কৈলাসে গিয়ে আগেভাগেই পৌঁছে দেয় দেবীর আগমনী বার্তা। দীর্ঘদিন ধরে এই আচার পালিত হয়ে আসছে বাংলার বনেদি বাড়ির পুজোগুলিতে। তবে ৯০ দশকের শেষ থেকে এই প্রথার বিরুদ্ধে কড়াকড়ি শুরু হয় এবং বর্তমানে এটি প্রায় বিলুপ্ত।
দেশজুড়ে গত ১২ বছরে ৩০ শতাংশ কমে গেছে নীলকণ্ঠ পাখির সংখ্যা। তবুও দশমীর প্রাচীন রীতিতে এখনও কোথাও কোথাও ওড়ানো হচ্ছে এই বিলুপ্তপ্রায় পাখি, যা ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের (শিডিউল-২) আওতায় সুরক্ষিত। এই প্রথা নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।পরিবেশকর্মীরা সচেতনতা বাড়াতে মাটির বা শোলার প্রতীকী পাখি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন।
একসময় কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোগুলিতে আসল পাখি ওড়ানোর প্রথা প্রচলন থাকলেও এখন বেশিরভাগ জায়গায় শোলার তৈরি নীলকণ্ঠ ব্যবহৃত হয়। তবে এখনও কয়েকটি পুজোয় এই প্রথা বজায় রয়েছে বলে অভিযোগ।সাউথ গড়িয়া জমিদারবাড়ির পুজো এবং বারুইপুরের রায়চৌধুরী পরিবার এখনও দশমীতে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ায় বলে অভিযোগ।
সাউথ গড়িয়া জমিদারবাড়ির পরমজিত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “৩৬০ বছর ধরে এই রীতি চলছে।” বারুইপুরের শক্তি রায়চৌধুরীর বক্তব্য, “প্রশাসন যদি লিখিত নির্দেশ দেয়, আমরা বন্ধ করব।”কিন্তু বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটির সুজন চ্যাটার্জি প্রশ্ন তুলেছেন, “লিখিত নির্দেশের প্রয়োজন কেন? অপরাধ মানে অপরাধ।”হিউম্যান এন্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যালায়েন্স লিগ-এর মেঘনা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আমরা ইতিমধ্যেই চিফ ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছি।”
এই প্রথার জন্য পুজোর বেশ কিছুদিন আগে থেকেই পাখি শিকারিরা নীলকন্ঠ পাখি ধরে খাঁচায় বন্দি করত। বন্দি থাকার কারণে অনেক পাখি দুর্বল হয়ে যেত এবং ওড়ার পর মারা যেত। এটি প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা হিসেবে বিবেচিত হয়। অবাধ শিকারের ফলে একসময় এই পাখির সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে যেতে শুরু করে।
পরিবেশবিদদের পক্ষ থেকে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার পর এই প্রথা বন্ধে জোরাল আন্দোলন শুরু হয়।নীলকন্ঠ পাখি বর্তমানে ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, ১৯৭২-এর অধীনে সুরক্ষিত। এই পাখি ধরা, বন্দি করা বা কেনা-বেচা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বন্যপ্রাণী ও পরিবেশপ্রেমী সংস্থাগুলোর প্রতিবাদ এবং সরকারি পদক্ষেপের ফলেই এই প্রথা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে অনেকেই।