
দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি
শ্রীরামপুরে দুর্গাপুজোর কার্নিভালকে কেন্দ্র করে উন্মাদনা ও উৎসবের আনন্দে মেতে উঠলেন হুগলির বাসিন্দারা। চার দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের যে মেজাজ যে উৎসাহ ছিল মানুষের মনে, তাকে ছাপিয়ে গেল শনিবারের এই উৎসবের কার্নিভাল। ইউনেস্কো কলকাতার দুর্গাপুজোকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় দুর্গাপুজোর কার্নিভালের প্রচলন করেন। আর কলকাতার সেই কার্নিভালের দেখানো পথে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন জেলায় চালু হয়েছে বিসর্জনের কার্নিভাল।

ভারতবর্ষের গোয়ায় মান্ডবী নদীর তীর বরাবর বহু বছর ধরে কার্নিভালের প্রচলন আছে। আর সেই কার্নিভালকে কেন্দ্র করে সেই রাজ্যের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ইন্টারনেটের দৌলতে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গিয়েছে। গোয়ার সেই কার্নিভাল দেখতে সারা বিশ্ব থেকে মানুষ আজ ভিড় জমান। কিন্তু দুর্গাপুজোর বিসর্জনের কার্নিভালের মধ্য দিয়ে বাংলার সংস্কৃতি ঐতিহ্য তুলে ধরার যে প্রয়াস তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আগামী দিনে বাংলার এই কার্নিভাল দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ বাংলায় ছুটে আসবেন বলে মনে করছেন অনেকেই।

সারা বিশ্ব জুড়ে যেখানে ধর্মীয় উন্মাদনা মানুষের মনে ভেদাভেদের সৃষ্টি করছে সেখানে ভেদাভেদ ভুলে শনিবার জাতি ধর্ম নির্বিশেষে শ্রীরামপুরের এই কার্নিভালে সকলেই উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন। উৎসবের মধ্য দিয়ে ভেদাভেদ ভুলে এই সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের নিদর্শন হয়ে থাকল শ্রীরামপুরের কার্নিভাল। শনিবার বিকেলে শ্রীরামপুরের মাহেশে জগন্নাথ দেবের স্নানপিড়ি মাঠ থেকে এই কার্নিভালের সূচনা হয়। হুগলি জেলার ১৭ টি দুর্গোৎসব পুজো কমিটি এই কার্নিভালে অংশগ্রহণ করে। জেলাশাসক মুক্তা আর্যার উপস্থিতিতে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কার্নিভালের সূচনা করেন।

এদিনের এই কার্নিভালে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার সহ জেলার বিধায়করা ও পুরসভার চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে কার্নিভাল এগিয়ে চলতে থাকে। পাশাপাশি এই শোভাযাত্রার মধ্য দিয়েই ডিভিসির ছাড়া জলে খানাকুলবাসীর আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত হয়। খানাকুলের মানুষ এদিন এই শোভাযাত্রায় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে ছবির মাধ্যমে তাঁদের দুর্দশার ছবি তুলে ধরেন। এ যেন ২৬ -এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে কার্নিভালের মধ্য দিয়েই ডিভিসির জল ছাড়ার বিরুদ্ধে রীতিমতো প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠেছে হুগলির মানুষ।

বাংলার ঐতিহ্যবাহী ছৌ নৃত্য থেকে শুরু করে আদিবাসী নৃত্যের তালে তাল মেলালেন সাধারণ মানুষ। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও ধুনুচি হাতে নৃত্য করেন। স্নানপিড়ি মাঠ থেকে কার্নিভাল শুরু হয়ে শ্রীরামপুর বটতলায় গঙ্গার ঘাটে গিয়ে শেষ হয়। সবকিছু মিলিয়ে দুর্গোৎসবের অঙ্গ হয়ে থাকল বিসর্জনের এই কার্নিভাল।