
মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়া জেলায় কাশির সিরাপ পান করে ১১ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। শনিবার রাতে প্রশাসনের নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়েছে শিশু-চিকিৎসক ডাঃ প্রবীণ সোনিকে, যিনি শিশুদের ওই বিষাক্ত কাফ সিরাপ প্রেসক্রাইব করেছিলেন বলে অভিযোগ।শনিবার সকালেই শ্রেসুন ফার্মাসিউটিক্যালস–এর পরিচালকদের পাশাপাশি ডাঃ সোনির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। মামলা হয়েছে ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায়। অভিযোগ দায়ের করেন পারাসিয়া কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের ব্লক মেডিক্যাল অফিসার অঙ্কিত সাহলাম।
মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদবের নির্দেশে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সোনিকে তৎক্ষণাৎ সাসপেন্ড করা হয়েছে শিশুদের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে।তদন্তে জানা গেছে, মৃত অধিকাংশ শিশুর চিকিৎসায় ডাঃ সোনিই প্রেসক্রাইব করেছিলেন ‘কোল্ডরিফ’ নামের কাফ সিরাপটি। শুক্রবার পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার পর প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ওই সিরাপে ছিল ৪৮.৬% ডাইইথিলিন গ্লাইকোল, যা একটি মারাত্মক বিষাক্ত রাসায়নিক, যা কিডনি অকেজো করে মৃত্যু ঘটাতে পারে।পরীক্ষায় বিষাক্ত উপাদান ধরা পড়ার পর শনিবার মধ্যপ্রদেশ সরকার ‘কোল্ডরিফ’ সিরাপের বিক্রি ও বিতরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।

রাষ্ট্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রকের আদেশ অনুযায়ী, সিরাপটি তৈরি হয়েছিল তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরম জেলার শ্রেসুন ফার্মাসিউটিক্যালস-এ। ২ অক্টোবরের তামিলনাড়ু ড্রাগ কন্ট্রোল ডিরেক্টরেটের রিপোর্টে সিরাপটিকে “নন-স্ট্যান্ডার্ড ও ডিফেকটিভ” ঘোষণা করা হয়েছিল।সরকারি নির্দেশে এখন সমস্ত স্টক সিল করে ফেলা হয়েছে এবং সংস্থাটির অন্যান্য পণ্য বিক্রির উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।সূত্র জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব শীঘ্রই সকল রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসচিব ও ড্রাগ কন্ট্রোলারদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করবেন। উদ্দেশ্য, কাফ সিরাপের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার ও গুণমান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা।ছিন্দওয়াড়ায় প্রথমে ৯ শিশুর মৃত্যু ঘটে, পরে আরও ২ শিশুর মৃত্যু হয়, মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১১।

সব শিশুদের মধ্যেই বমি, জ্বর, পেট ব্যথা ও কিডনি ফেলিওরের লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, প্রত্যেকেই একই ব্যাচের ‘কোল্ডরিফ’ সিরাপ পান করেছিল।রাজ্য সরকার সিরাপটির বিক্রি, বিতরণ ও মজুত রাখা অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে, ওষুধ সংস্থাটির অন্যান্য পণ্যও পরীক্ষা ও যাচাইয়ের আওতায় আনা হয়েছে। তামিলনাড়ুতেও সংস্থাটির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে।
