
কাশির সিরাপ কোল্ডরিফকে (Coldrif) ঘিরে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরমের স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালস(Sresan Pharmaceuticals) কোম্পানির বাজারজাত ওষুধের একটি নির্দিষ্ট ব্যাচকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ। তামিলনাডু, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা প্রশাসন তাদের রাজ্যে ইতিমধ্যেই কোল্ডরিফ কাশির সিরাপ বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। এদিকে কাশির সিরাপ কোল্ডরিফকে ঘিরে বিতর্কের মাঝেই রাজ্যগুলির উদ্দেশে কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রক বার্তা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরামর্শ, ৫ বছরের কম কিংবা ৫-এর কিছু বেশি বয়সীদের জন্য কাশির সিরাপ সুপারিশ উচিত নয়। তাছাড়া এই ধরনের সিরাপ ব্যবহারের আগে সতর্কতামূলক ক্লিনিকাল মূল্যায়ন অনুসরণ করা উচিত। যা নিবিড় তত্ত্বাবধানে এবং যথাযথ ডোজ কঠোরভাবে মেনে চলা যেমন দরকার, তেমনি স্বল্পতম কার্যকর সময়কাল এবং একাধিক ওষুধের সংমিশ্রণও এড়ানো উচিত।গত শুক্রবারই দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছিল যে কোল্ডরিফ কাশি সিরাপের নমুনা বিভিন্ন রাজ্য কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা করেছে এবং এতে অনুমোদিত সীমা অতিক্রম করেছে ডাইথিলিন গ্লাইকল (DEG)। ডাইথিলিন গ্লাইকল একটি বিষাক্ত দ্রাবক, যা শিল্প পণ্যে ব্যবহৃত হয় এবং কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। কোল্ডরিফ কাশি সিরাপ ঘিরে বিতর্ক শুরু হতেই কেরল সরকার তাদের রাজ্য জুড়ে এর বিক্রি যেমন স্থগিত করেছে, তেমনি সতর্কতামূলক পদক্ষেপও করেছে। কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ গত শনিবারই জানান, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান সহ অন্যান্য রাজ্য থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, এই বিতর্কিত সিরাপটি বেশ কয়েকটি শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। প্রসঙ্গত, তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরমের স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালস-এর বাজারজাত কোল্ডরিফ কাশি সিরাপ শিরোনামে এসেছিল গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে। ছিন্দওয়ারা জেলায় কিডনি সংক্রমণের সন্দেহে কমপক্ষে ১৪ শিশুর মৃত্যুর জেরে নড়েচড়ে বসে মধ্যপ্রদেশ প্রশাসন। শুধু মধ্যপ্রদেশেই নয়, রাজস্থানেও বিতর্কিত এই কাশি সিরাপটিকে ঘিরে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির সরকারি ল্যাবরেটরিতে কোল্ডরিফ কাশি সিরাপটি পরীক্ষা করতেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সিরাপটিতে ধরা পড়েছে উচ্চ মাত্রার ডাইথিলিন গ্লাইকল। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে সিরাপের নমুনায় ৪৮.৬ শতাংশ ডাইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া গেছে। যা একটি অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ। তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর কাশির সিরাপটিকে “মানসম্মত নয়” বলে ঘোষণা করেছেন। এবং অবিলম্বে বাজার থেকে এটি তুলে নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।CDSCO তথা Central Drugs Standard Control Organization মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে শিশু মৃত্যুর প্রেক্ষিতে কাশির সিরাপ, অ্যান্টিপাইরেটিক এবং অ্যান্টিবায়োটিক সহ ১৯টি ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করছে। এবং একই সঙ্গে ৬ টি রাজ্যের ওষুধ উৎপাদন ইউনিটগুলিতে পরিদর্শন শুরু করেছে। জানানো হয়েছে, অসঙ্গতি মিললে সংশ্লিষ্ট ওষুধ কিংবা সিরাপের পাশাপাশি ফার্মা কোম্পানির বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হবে।