
নিম্নচাপের জেরে প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। শনিবার রাতের টানা বৃষ্টিতে তছনছ উত্তরবঙ্গ। উত্তরবঙ্গে ভেঙে পড়েছে দুটি লোহার সেতু, প্লাবন ও ধসে মৃত্যু হয়েছে কয়েকজনের। দার্জিলিং, কালিম্পং সহ আলিপুরদুয়ারের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। দুর্যোগের জেরে উত্তরবঙ্গে আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যালোচনা করতে সোমবারই মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে নিয়ে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সকালে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লম্বা পোস্ট করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখেছেন, “গত রাতে উত্তরবঙ্গে ১২ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তার সঙ্গে ভুটান ও সিকিম থেকে অতিরিক্ত জলের চাপ এসে তিস্তা সহ অন্যান্য নদীগুলিতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে কয়েকজন ভাই-বোনকে আমরা হারিয়েছি। মৃতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। রাজ্য সরকার মৃতদের পরিবারের পাশে রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত সহায়তা পৌঁছে দেবে।”শনিবার রাত থেকে রাজ্যের বিপর্যয় পরিস্থিতির উপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্যের ডিজিপি, উত্তরবঙ্গের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে একাধিক ভার্চুয়াল বৈঠকও করেছেন। ভার্চুয়াল বৈঠকে ছিলেন গৌতম দেব ও অনীত থাপার মতো জনপ্রতিনিধিরাও।
মমতা লিখেছেন, “আমি নিজে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি এবং সোমবার মুখ্যসচিবকে নিয়ে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছি।”সোশাল মিডিয়ায় মমতা আরও লিখেছেন, ”মিরিক, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, মাটিগাড়া এবং আলিপুরদুয়ারে উদ্বেগজনক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। আমরা উত্তরবঙ্গের পর্যটকদের পরামর্শ দিচ্ছি যে তারা যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন, যতক্ষণ না আমাদের পুলিশ তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়। তাঁদের উদ্ধার করে আনার যাবতীয় খরচ আমাদের এবং পর্যটকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই।”মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও, উত্তরবঙ্গের বিপর্যয় ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভার তৃণমূল দলনেতা অভিষেক তাঁর সোশাল মিডিয়া পোস্টে সমবেদনা প্রকাশ করেছেন শোকাহত পরিবারের সদস্যদের কাছে। লিখেছেন, ”রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, দার্জিলিং জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ত্রাণ ও উদ্ধার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।”ভরসা জুগিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, ”দয়া করে জেনে রাখুন যে আপনি এই কঠিন সময়ে একা নন। আমি প্রতিটি @AITCofficial স্বেচ্ছাসেবককে সমবেদনা এবং অঙ্গীকারের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছনোর, পাশে থাকার এবং সহায়তা করার জন্য আবেদন করছি। সম্মিলিত সংকল্প এবং মা দুর্গার আশীর্বাদে, আমরা একসঙ্গে এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠব।”

প্রাকৃতিক দুর্যোগে উত্তরবঙ্গের বিপর্যয় ঘিরে উদ্বিগ্ন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের বিধায়ক সোশাল মিডিয়ায় তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে বিপর্যস্তদের পাশে দাঁড়াতে পদক্ষেপ করার কথাও লিখেছেন পদ্ম বিধায়ক।এক্স হ্যান্ডেলে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, ”অবিরাম ভারী বর্ষণে দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কার্শিয়াঙের পাহাড়ি অঞ্চলগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ভূমিধস এবং বন্যার কারণে শিলিগুড়ি, তরাই এবং ডুয়ার্সের সমভূমির সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন। দুধিয়ায় বালাসন নদীর উপর লোহার সেতুটি শিলিগুড়ি এবং মিরিকের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে। সেটিও ভেঙে পড়েছে। ফলে হাজার হাজার বাসিন্দা সেখানে আটকে পড়েছেন।”
পোস্টে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে উদ্দেশ করে শুভেন্দু লিখেছেন, ”অবিলম্বে সম্পদ সংগ্রহ এবং দুর্গত অঞ্চলগুলিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি। দুর্দশাগ্রস্ত জনগণকে সাহায্য করার জন্য খাদ্য, জল, ওষুধ এবং অস্থায়ী আশ্রয়স্থল সহ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। উত্তরবঙ্গে আমাদের সহ-নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং মঙ্গলই সর্বাগ্রে থাকা উচিত।”এদিকে দুই বঙ্গের বিপর্যয় ঘিরে নবান্ন সহ সব জেলা সদরেই চালু করা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম। বিপর্যস্ত এলাকা থেকে কেউ সাহায্যের জন্য কোথায় যোগাযোগ করবেন তা জানিয়েছে নবান্ন। সরাসরি ফোন করা যাবে নবান্নের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোল রুমে। ফোন নম্বর 033-2214-3526 / 033-2253-5185 এবং টোল ফ্রি নম্বর: 86979-81070 / 1070