
পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার দুধিয়া এলাকায় ভয়াবহ সেতু দুর্ঘটনায় ও ব্যাপক বৃষ্টিপাতে অন্তত সতেরো জনের প্রাণহানি হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে প্রবল বর্ষণের মধ্যে একটি আয়রন ব্রিজ ভেঙে পড়ে গাড়ি-সহ বহু মানুষ নদীতে পড়ে যান। ঘটনাস্থলে রাতভর চলে উদ্ধারকাজ। কার্শিয়াঙের অতিরিক্ত এসপি অভিষেক রায় জানিয়েছেন, “ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত, একাধিক মানুষ নিখোঁজ, তাদের খোঁজ চলছে।”দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রবিবার সকালে সামাজিক মাধ্যমে শোকপ্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, “দার্জিলিংয়ে সেতু দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় আমি গভীরভাবে ব্যথিত। যাঁরা আপনজন হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেবে।প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ধসের জেরে সেতুর নীচের অংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। দুধিয়া নদীর উপর নির্মিত ওই ব্রিজটি দার্জিলিং-মিরিক সংযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ ছিল। দুর্ঘটনার সময় ব্রিজের উপর দিয়ে কয়েকটি গাড়ি চলাচল করছিল। এর মধ্যে একটি জিপ ও একটি ট্রাক নদীতে পড়ে যায়।উদ্ধারকাজে প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ অংশ নেন। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। নদীতে তল্লাশি চালিয়ে ৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আহতদের মিরিক ও শিলিগুড়ির বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাতেই জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি মৃতদের পরিবারপিছু ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়ভার রাজ্য সরকার বহন করবে বলে ঘোষণা করেন। মুখ্যমন্ত্রী টুইট করে জানান, “এই দুর্ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে প্রশাসন সর্বোচ্চ তৎপরতা দেখাচ্ছে।”কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকও আশপাশের হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত চিকিৎসক দল পাঠিয়েছে। একইসঙ্গে, সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রক ব্রিজটির কাঠামো ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে দার্জিলিং, কালিম্পং ও সিকিম অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বাসিন্দাদের অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত এড়াতে এবং নদীর ধারে না যেতে অনুরোধ করেছে।দার্জিলিং জেলা প্রশাসন ও সেচ দফতর যৌথভাবে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া এবং ধারাবাহিক ভারী বৃষ্টির কারণে সেতুর স্তম্ভ দুর্বল হয়ে গিয়েছিল।কেন্দ্রও ন্যাশনাল ব্রিজ সেফটি অথরিটি-র মাধ্যমে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে।