
বিহার বিধানসভা নির্বাচন দুই দফায়, ভোটগ্রহণ ৬ ও ১১ নভেম্বর, গণনা ১৪ নভেম্বর
SIR নিয়ে ‘সুপ্রিম’ শুনানির আগের দিনেই বিহারে ভোট ঘোষণা
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানিয়েছেন, দুই দফায় অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। প্রথম দফার ভোট ৬ নভেম্বর এবং দ্বিতীয় দফা ১১ নভেম্বর। ভোট গণনা হবে ১৪ নভেম্বর।
রাজ্যের মোট ২৪৩ আসনের মধ্যে প্রথম দফায় ১২১টি এবং দ্বিতীয় দফায় বাকি ১২২টি আসনে ভোট নেওয়া হবে।
নির্বাচনের এই সময়সূচির ইঙ্গিত আগেই পাওয়া গিয়েছিল যে, ভোট দীপাবলি ও ছটের পরেই হবে। চলতি বছর দীপাবলি ও ছটপুজো ১৮ থেকে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, উৎসব শেষে ভোট হলে ভোটারদের অংশগ্রহণ বেশি হবে।
এই নির্বাচনে মুখোমুখি হচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপি-জেডিইউ জোট এবং কংগ্রেস ও আরজেডি নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন।
রাজনীতির আলোচিত মুখ প্রশান্ত কিশোর, যিনি এর আগে নীতীশ কুমার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী সাফল্যের কৌশল নির্মাতা ছিলেন, এবার নিজস্ব দল জন সুরজ-এর প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার নির্বাচনে লড়বেন। তাঁর দল রাজ্যের ২৪৩ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
এই ভোট হবে রাজনৈতিক ও আইনি বিতর্কের ছায়ায়, কারণ রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (এসআইআর) নিয়ে বিরোধ চলছে। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি।
এই প্রক্রিয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশন সমালোচকদের বিরুদ্ধে অনলাইন প্রচার চালানোর অভিযোগ তুলেছে এবং জানিয়েছে, যাচাইকৃত ভোটারদের নতুন কার্ড ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া কমিশন জানিয়েছে, এখন থেকে ভোটার কার্ডের আবেদন পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই নতুন কার্ড ইস্যু করা হবে।
অন্যদিকে বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করেছে, এই পুনর্বিবেচনার সময়সূচি ইচ্ছাকৃতভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বহু ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে। তারা ‘ভোট জালিয়াতি’র অভিযোগ তুলে বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।
কমিশনের দাবি, এই পুনর্বিবেচনা শুধু যোগ্য ভারতীয় নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতেই করা হয়েছে। তদন্তে নেপালি ও বাংলাদেশি নাগরিকদের নাম ভোটার তালিকায় পাওয়া গিয়েছিল বলেও কমিশন জানিয়েছে। এর ফলে রাজ্যের ভোটার সংখ্যা ৭.৯0 কোটির বদলে কমে দাঁড়িয়েছে ৭.২৪ কোটিরও নীচে।
এই ইস্যু নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে তীব্র বিতর্ক হয়। আদালত জানিয়েছে, কোনও বেআইনি কার্যকলাপ প্রমাণিত হলে যে কোনও সময় এই প্রক্রিয়া বাতিল করা যেতে পারে।
২০২০ সালের নির্বাচনে বিজেপি-জেডিইউ জোট ১২৫টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে (বিজেপি ৭৪, জেডিইউ ৪৩, অন্যান্য ৮)। মহাগঠবন্ধন পেয়েছিল ১১০টি আসন (আরজেডি ৭৫, কংগ্রেস ১৯, অন্যান্য ১৬)।
নীতীশ কুমার তখন বিজেপির সঙ্গী হিসেবে সপ্তমবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হন। তবে অর্ধেক মেয়াদ পার হতেই তিনি জোট ছাড়েন এবং মহাগঠবন্ধনে যোগ দেন। পরে আবার দু’বছর পর ফিরে গিয়ে বিজেপিরই হাত ধরেন এবং বর্তমানে তিনি ফের গেরুয়া শিবিরের অংশ।
২০২৫ সালের এই বিহার নির্বাচন আগামী দুই বছরের একাধিক রাজ্য ভোটের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০২৬ সালে অসম, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুতে এবং ২০২৭ সালে পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ সহ একাধিক রাজ্যে ভোট হবে, যা শেষ পর্যন্ত ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল বলা যেতে পারে।
এছাড়া, নির্বাচন কমিশন আটটি বিধানসভা উপনির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে দুটি জম্মু ও কাশ্মীরে (একটি বদগাম, যা মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা পদত্যাগের পর শূন্য হয়েছে) এবং বাকিগুলি রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা, পঞ্জাব, মিজোরাম ও ওড়িশায় অনুষ্ঠিত হবে।